রাজসিংহ
রাজসিংহ। আরও কথা আছে। রূপবতী ভার্যা তে পুরুষ অত্যন্ত আসক্ত হয়। ইহা রাজার পক্ষে অত্যন্ত নিন্দনীয়। কেন না, তাহাতে রাজকার্যের ব্যাঘাত ঘটে।
চ। রাজারা বহুশত মহিষী কর্তৃক পরিবৃত থাকিয়াও রাজকার্যে অমনোযোগী হয়েন না। আমার ন্যায় বালিকার প্রণয়ে মহারাণা রাজসিংহের রাজকার্যে বিরাগ জন্মিবে, ইহা অতি অশ্রদ্ধার কথা।
রাজসিংহ। কথা তত অশ্রদ্ধেয় নহে। শাস্ত্রে বলে, “বৃদ্ধস্য তরুণী বিষম্ |”
চ। মহারাজ কি বৃদ্ধ?
র। যুবা নহি।
চ। যাহার বাহুতে বল আছে, রাজপুতকন্যার কাছে সেই যুবা। দুর্বল যুবাকে রাজপুতকন্যাগণ বৃদ্ধের মধ্যে গণ্য করেন।
রা। আমি সেরূপ নহি।
চ। কীর্তিই রাজাদিগের রূপ।
র। রূপবান, বলবান, যুবা রাজপুত্রের অভাব নাই।
চ। আমি আপনাকে আত্মসমর্পণ করিয়াছি। অন্যের পত্নী হইলে দ্বিচারিণী হইব। আমি অত্যন্ত নির্লজ্জের মত কথা বলিতেছি। কিন্তু মনে করিয়া দেখিবেন, দুষ্মন্ত কর্তৃক পরিত্যক্ত হইলে, শকুন্তলা লজ্জা ত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। আমারও আজ প্রায় সেই দশা। আপনি আমায় পরিত্যাগ করিলে আমি রাজসমন্দরে সরোবরে ডুবিয়া মরিব।3
রাজসিংহ বাক্যুদ্ধে এইরূপ পরাভব প্রাপ্ত হইয়া বলিলেন, “তুমিই আমার উপযুক্ত মহিষী। তবে তুমি কেবল বিপদে পড়িয়া আমাকে পতিত্বে বরণ করিয়াছিলে; এক্ষণে আমার হাত হইতে উদ্ধারের ইচ্ছা রাখ কি না, আমার এই বয়সে তুমি আমাতে অনুরাগিণী হইতে পারিবে কি না, আমার মনে এই সকল সংশয় ছিল। সে সকল সংশয় আজিকার কথাবার্তায় দূর হইয়াছে। তুমি আমার মহিষী হইবে। তবে একটা কথার অপেক্ষা করিতে চাই। তোমার পিতার ক্ষুদ্র রাজ্য এবং তাঁহার সৈন্য অল্প, কিন্তু বিক্রম সোলাঙ্কি যে একজন বীরপুরুষ এবং উপযুক্ত সেনানায়ক, ইহা প্রসিদ্ধ। মোগলের সঙ্গে আমার যুদ্ধ বাধিবেই বাধিবে। বাধিলে, তাঁহার সাহায্য আমার পক্ষে বিশেষ মঙ্গলজনক হইবে। তাঁহার অনুমতি লইয়া বিবাহ না করিলে তিনি কখনও আমার সহায় হইবেন না। বরং তাঁর অমতে বিবাহ করিলে তিনি মোগলের সহায় এবং আমার শত্রু হইতে পারেন। তাহা বাঞ্ছনীয় নহে, অতএব আমার ইচ্ছা, তাঁহাকে পত্র লিখিয়া, তাঁহার সম্মতি আনাইয়া তোমাকে বিবাহ করি। তিনি সম্মত হইবেন কি?”
চ। না হইবার ত কারণ দেখি না। আমার ইচ্ছা, পিতা-মাতার আশীর্বাদ লইয়াই আপনার চরণসেবাব্রত গ্রহণ করি। লোক পাঠান আমারও ইচ্ছা।
তখন রাজসিংহ একখানি সবিনয় পত্র লিখিয়া, বিক্রম সোলাঙ্কির নিকট দূত প্রেরণ করিলেন। চঞ্চলকুমারীও মাতার আশীর্বাদ কামনা করিয়া একখানা পত্র লিখিলেন।
3- রাজসিংহের নির্মিত।