ইন্দিরা
“অমন কথা বলতে নেই বাবা!” এই কথা ছেলেকে বলিয়া আমার মুখপানে চাহিয়া হাসিয়া সুভাষিণী বলিল, “নিত্যই বলে।” আমি বলিলাম, “আপনার কাছে আমি দাসীপনা করিতেও রাজি।”
“আপনি কেন বল ভাই? বল ত মাকে বলিও। সেই মাকে লইয়া একটু গোল আছে। তিনি একটু খিট্“খিটে—তাঁকে বশ করিয়া লইতে হইবে। তা তুমি পারিবে—আমি মানুষ চিনি। কেমন রাজি?”
আমি বলিলাম, “রাজি না হইয়া কি করি? আমার আর উপায় নাই।” আমার চক্ষুতে আবার জল আসিল।
সে বলিল, “উপায় নাই কেন? রও ভাই, আমি আসল কথা ভুলিয়া গিয়াছি। আমি আসিতেছি।”
সুভাষিণী ভোঁ করিয়া ছুটিয়া মাসীর কাছে গেল—বলিল, “হাঁ গা, ইনি তোমাদের কে গা?”
ঐটুকু পর্যন্ত শুনিতে পাইলাম। তাঁর মাসী কি বলিলেন, তাহা শুনিতে পাইলাম না। বোধ হয়, তিনি যতটুকু জানিতেন, তাহাই বলিলেন। বলা বাহুল্য, তিনি কিছুই জানিতেন না; পুরোহিতের কাছে যতটুকু শুনিয়াছিলেন, ততটুকু পযর্ন্ত। ছেলেটি এবার মার সঙ্গে যায় নাই—আমার হাত লইয়া খেলা করিতেছিল। আমি তাহার সঙ্গে কথা কহিতেছিলাম। সুভাষিণী ফিরিয়া আসিল।
ছেলে বলিল, “মা, আঙ্গা হাত দেখ্।”
সুভাষিণী হাসিয়া বলিল, “আমি তা অনেক্ষণ দেখিয়াছি।” আমাকে বলিল, “চল গাড়ি তৈয়ার। না যাও, আমি ধরিয়া লইয়া যাইব। কিন্তু যে কথাটা বলিয়াছি—মাকে বশ করিতে হইবে।”
সুভাষিণী আমাকে টানিয়া লইয়া গিয়া গাড়িতে তুলিল। পুরোহিত মহাশয়ের দেওয়া রাঙ্গাপেড়ে কাপড় দুইখানির মধ্যে একখানি আমি পরিয়াছিলাম—আর একখানি দড়িতে শুকাইতেছিল—তাহা লইয়া যাইতে সময় দিল না। তাহার পরিবর্তে আমি সুভাষিণীর পুত্রকে কোলে লইয়া মুখচুম্বন করিতে করিতে চলিলাম।