৫। এই সমুদায় কার্য সম্পন্ন করিতে হইলে অর্থই প্রধান আবশ্যক, অতএব ভারতবর্ষের শুভানুধ্যায়ী, ও উন্নতীচ্ছু জনগণের নিকট বিনীতভাবে প্রার্থনা যে, “তাঁহারা আপন আপন ধনের কিয়দংশ অর্পণ করিয়া উপস্থিত বিষয়ের উন্নিতসাধন করেন।”

৬। অনুষ্ঠাতা মহেন্দ্র বাবু চাঁদা বা স্বাক্ষরদিগের নাম সাদরে গ্রহণ করিতেছেন।

এই অনুষ্ঠানপত্র আজ আড়াই বৎসর হইল প্রচারিত হইয়াছে, এই আড়াই বৎসরে বঙ্গসমাজ ৪০ চল্লিশ সহস্র টাকা স্বাক্ষর করিয়াছেন। মহেন্দ্র বাবু লিখিয়াছেন যে, এই তালিকাখানি একটি আশ্চর্য দলিল। ইহাতে যেমন কতকগুলি নাম থাকাতে স্পষ্টীকৃত হইয়াছে, তেমনি কতকগুলি নাম না থাকাতে উজ্জ্বলীকৃত হইয়াছে। তিনি আর কিছু বলিতে ইচ্ছা করেন না।

আমরা উপসংহারে আর গোটা দুই কথা বলিতে ইচ্ছা করি। বঙ্গধনীগণ, আপনারা মহেন্দ্র বাবুর ঈষৎ বক্রোক্তি অবশ্যই বুঝিয়া থাকিবেন। তবে আর কলঙ্কভার শিরে কেন বহন করেন? সকলেই অগ্রসর হউন। যিনি এক দিনে লক্ষ মুদ্রা ব্যয় করেন, তিনি কেন পশ্চাতে পড়েন? পুত্রকন্যার বিবাহে যাঁহারা লক্ষ লক্ষ মুদ্রা ব্যয় করেন, তাঁরা কেন নিশ্চিন্ত বসিয়া থাকেন। উড্রো সাহেব ভয়ানক বিজ্ঞানগুণ-অস্বীকারদোষ বঙ্গসমাজ-মস্তকে আরোপ করিবার চেষ্টা করিয়াছেন। একবার মুক্ত হস্তে দান করিয়া সমাজ স্থাপন করিয়া স্বীয় ভ্রম দূর করুন। বঙ্গীয় যুবকগণের অবস্থার উন্নতি সাধন করুন; বঙ্গের শিল্পবিদ্যার পুনরুদ্ধার করুন। মহাত্মা উড্রো সাহেবকে বলি, তিনি কাম্বেল সাহেবকে চিঠিতে যা বলিয়াছেন, তাহার কথায় আমাদের কাজ নাই, তিনি কেন একবার স্বজাতীয়গণকে এই মঙ্গলকর কার্যের সাহায্য করিতে বলুন না। যদি তালিকাতে একটিও শ্বেতাঙ্গের নাম না প্রকাশিত হয়, তাহা হইলে কত আক্ষেপের বিষয় হইবে।

—‘বঙ্গদর্শন’, ভাদ্র ১২৭৯