১১
ভীষণ নীরব। যেন মরেছে ধরণী।
হে ধাতঃ কাঁপালো স্তব্ধ আবার কি ধ্বনি ||
বলিছে গম্ভীর স্বরে, “রে নরযুগল।
দেবের নিকুঞ্জে এসে পাও কর্ম্মফল ||”
ফিরে বার ঘর ঘর,            গরজিল জলধর,
                       মাতিল মরুৎ ফিরে বার।
চেচায় অশনি ঘন,         ভীমবলে তরুগণ,
                     মত্ত শির নাড়িছে আবার ||
১২
থামিল ঝটিকারণ, হলো নিশাশেষ।
শ্বেতমেঘময়াকাশে, উদিল নিশেশ ||
জলে করে জলময়, কানন নিকুঞ্জ।
তরু লতা তৃণ ভূম, পুষ্পলতা পুঞ্জ ||
ফুলময় ছোট খাল বিমল চঞ্চল।
ছায়াকারী শাখা হতে ঝরে বিন্দুজল ||
উজ্জ্বল পুলিনতলে ম্লান তারা মত।
মরিয়ে রয়েছে ঝড়ে ললিতা মন্মথ ||
মানবের কি কপাল! সংসার কি ছার!
বহিতে জীবন ভার কে চাহিবে আর
নাথভুজে মাথা দিয়ে পড়েছে মোহিনী।
মুখে মুখে কাঁদে যেন দুটি সরোজিনী ||
ললিতার মুখশশী ভিজে বরিষায়।
সরোজ শিশির মাথা মাটিতে লোটায় ||
শীতল ললাটে জলে জ্বলে শশধর।
জলে ভিজে পড়ে আছে অলকানিকর ||
ফুটায় কবরী চারু, দীর্ঘ তৃণোপরে।
মন্মথ রয়েছে তবু নাহি তুলে ধরে ||
এখনো সুস্থির মুখ রূপের ছায়ায়।
প্রাণ গেল তবু রূপ নাহি ছাড়ে তায় ||
সেরূপ ঘুমায় যেন, সন্ধ্যা ধরাপরে;
ভয়ে প্রকৃতির যেন নিশ্বাস না সরে ||