পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা
এই সর্গে অনেক স্থানে আশ্চর্য কবিত্ব প্রকাশ আছে, তাহা দেখাইবার আমাদিগের অবকাশ নাই। অন্যান্য সর্গ সম্বন্ধে অধিকতর বক্তব্য আছে।
এই দেবসমাজে ইন্দ্র ছিলেন না। তিনি কুমেরু শিখরে নিয়তির আরাধনা করিতেছিলেন। অমরগণ বিনা ইন্দ্রেই পুনর্যুদ্ধ অভিপ্রেত করিলেন।
দ্বিতীয় সর্গ ইন্দ্রালয়ে। প্রথম সর্গে রৌদ্র ও বীর রসের তরঙ্গ তুলিয়া কুশলময় কবি সহসা সে ক্ষুব্ধ সাগর শান্ত করিলেন। সহসা এক অপূর্ব মাধুর্যময়ী সৃষ্টি সম্প্রসারিত করিলেন। নন্দনবনে বৃত্রমহিষী ঐন্দ্রিলা নবপ্রাপ্ত স্বর্গসুখে সুখময়ী—
রতি ফুলমালা হাতে দেয় তুলি,
পরিছে হরিষে সুষমাতে ভুলি
বদন মণ্ডলে ভাসিছে ব্রীড়া।
পরিছে হরিষে সুষমাতে ভুলি
বদন মণ্ডলে ভাসিছে ব্রীড়া।
এই চিত্রমধ্যে বসন্ত-পবনের মাধুর্যের ন্যায় একটি মাধুর্য আছে—কিসের সে মাধুর্য, পবন-মাধুর্যের ন্যায় তাহা অনির্বচনীয়—স্বপ্নবৎ—
করিছে শয়ন কভু পারিজাতে
মৃদুল মৃদুল সুশীতল বাতে
মুদিয়া নয়ন কুসুমে হেলি।
মৃদুল মৃদুল সুশীতল বাতে
মুদিয়া নয়ন কুসুমে হেলি।
এই সুখশয্যায় শয়ন করিয়া, ঐন্দ্রিলা স্বামীর কাছে সোহাগ বাড়াইতে লাগিলেন। তিনি স্বর্গের অধীশ্বরী হইয়াছেন, তথাপি তাঁহার সাধ পূরে না—শচীকে আনিয়া দাসী করিয়া দিতে হইবে। বৃত্রাসুর তাহাতে স্বীকৃত হইলেন। এই কথোপকথন আমাদিগের তত ভাল লাগে নাই। ইন্দ্রজয়ী মহাসুরের সঙ্গে মহাসুরের মহিষী নন্দনে বসিয়া এই কথোপকথন করিতেছেন, গ্রন্থ পড়িতে পড়িতে ইহা মনে থাকে না, মর্ত্যভূমে সামান্যা বঙ্গগৃহিণীর স্বামিসম্ভাষণ বলিয়া কখন কখন ভ্রম হয়।
তৃতীয় সর্গে, বৃত্রাসুর সভাতলে প্রবেশ করিলেন
নিবিড় দেহের বর্ণ মেঘের আভাস,
পর্বতের চূড়া যেন, সহসা প্রকাশ—
পর্বতের চূড়া যেন, সহসা প্রকাশ—
“পর্বতের চূড়া যেন সহসা প্রকাশ” ইহা প্রথম শ্রেণীর কবির উক্তি—মিল্টনের যোগ্য। বৃত্রসংহার কাব্য মধ্যে এরূপ উক্তি অনেক আছে। —‘বঙ্গদর্শন’, মাঘ ১২৮১, পৃ. ৪৭২-৭৩।