ইন্দিরা
বসুজপত্নী আর কিছু না বলিয়া ভারি হইয়া বসিয়া রহিলেন। আমি ভাবিতে লাগিলাম। ভাবিলাম, এ প্রভেদ কেন হয়? এক জিনিস দুই রকম লাগে কেন? যে দান দরিদ্রকে দিলে পুণ্য হয়, তাহা বড়মানুষকে দিলে খোষামোদ বলিয়া গণ্য হয় কেন? যে ক্ষমা পরমধর্ম, দুষ্কৃতকারীর প্রতি প্রযুক্ত হইলে, তাহা মহাপাপ কেন? সত্য সত্যই কেহ স্ত্রীকে বনে দিয়া আসিলে লোকে তাহাকে মহাপাপী বলে; কিন্তু রামচন্দ্র সীতাকে বনে দিয়াছিলেন, তাঁহাকে কেহ মহাপাপী বলে না কেন?
ঠিক করিলাম, অবস্হাভেদে এসকল হয়।কথাটা আমার মনে রহিল।আমি হইার পর একদিন যে নির্লজ্জ কাজের কথা বলিব, তাহা এই কথা মনে করিয়া করিয়াছিলাম।তাই এ গানটা এখানে লিখিলাম।
নৌকাপথে কলিকাতা আসিতে দূর হইতে কলিকাতা দেখিয়া, বিস্মিত ও ভীত হইলাম। অট্টালিকার পর অট্টালিকা, বাড়ীর গায়ে বাড়ী, বাড়ীর পিঠে বাড়ী, তার পিঠে বাড়ী, অট্টালিকার সমুদ্র—তাহার অন্ত নাই, সংখ্যা নাই, সীমা নাই। জাহাজের মাস্তুলের অরণ্য দেখিয়া জ্ঞান বুদ্ধি বিপর্যস্ত হইয়া গেল। নৌকার অসংখ্য, অনন্ত শ্রেণী দেখিয়া মনে হইল, এত নৌকা মানুষে গড়িল কি প্রকারে?* নিকটে আসিয়া দেখিলাম, তীরবর্তী রাজপথে গাড়ি পাল্কী পিঁপড়ের সারির মত চলিয়াছে—যাহারা হাঁটিয়া যাইতেছে, তাহাদের সংখ্যার ত কথাই নাই। তখন মনে হইল, ইহার ভিতর খুড়াকে খুঁজিয়া বাহির করিব কিপ্রকারে? নদীসৈকতের বালুকারাশির ভিতর হইতে, চেনা বালুকাকণাটি খুঁজিয়া বাহির করিব কিপ্রকারে?