আমরা স্বীকার করিয়াছিলাম যে, এই গ্রন্থখানি সবিস্তারে সমালোচিত করিব। অবকাশাভাবে এ পর্যন্ত অভিপ্রায় সিদ্ধ করিতে পারি নাই। পাঠকেরা ত্রুটি মার্জনা করিবেন।
এ দেশীয় কোন সুশিক্ষিত ব্যক্তি, সন ১৮৬৮ সালে ইংলণ্ডে গমন করেন। তথায় তিন বৎসর অবস্থিতি করেন। ইংলণ্ড হইতে সহোদরকে পত্র লিখিতেন। তিন বৎসরে যে সকল পত্র লিখিয়াছিলেন, তাহার কিয়দংশ সংগ্রহ করিয়া পুস্তকাকারে প্রকাশ করিয়াছেন। পুস্তক লেখকের নাম প্রকাশিত হয় নাই।
এইরূপ একখানি গ্রন্থের প্রয়োজন ছিল। ইংরাজি শিক্ষার প্রসাদে আমরা ইংরাজি গ্রন্থাদি হইতে ইংলণ্ডের বিষয় অনেক অবগত হইয়াছি, এবং এখানেও অনেক ইংরাজ দেখিতে পাই। তথাপি, অন্ধ যেমন স্পর্শের দ্বারা হস্তির আকার অনুভূত করিয়াছিল, ইংলণ্ড সম্বন্ধে আমাদিগের অনেক বিষয়ে সেইরূপ জ্ঞান। ইংরাজি গ্রন্থ বা পত্রাদি ইংরাজের প্রণীত। ইংরাজের চক্ষে যেমন দেখায়, তাহাতে ইংলণ্ড সেইরূপ চিত্রিত। আমাদিগের চক্ষে ইংলণ্ড কিরূপ দেখাইবে, তাহার কিছুই সে সকলে পাওয়া যায় না। মসূর তাইন একজন কৃতবিদ্য ফরাশী। তিনি ফরাশীর চক্ষে ইংলণ্ড দেখিয়া, তদ্দেশবিবরণ একখানি গ্রন্থ প্রচারিত করিয়াছেন। তৎপাঠে আমরা জানিতে পারি যে, ইংরাজের চিত্রিত ইংলণ্ড হইতে মসূর তাইনের চিত্রিত ইংলণ্ড অনেক বিষয়ে স্বতন্ত্র। ইংরাজ ও ফরাশীতে বিশেষ সাদৃশ্য; আমাদিগের চক্ষে দেখিতে গেলে উভয়ে এক দেশবাসী, এক জাতি, এক ধর্মাক্রান্ত; উভয়ের এক প্রকার শিক্ষা, এক প্রকার আচার ব্যবহার, এক প্রকার স্বভাব। যদি ফরাশীর লিখিত চিত্রে ইংলণ্ড এইরূপ নূতন বস্তু বলিয়া বোধ হয়, তবে বাঙ্গালীর বর্ণনায় আরও কত তারতম্য ঘটিবে, তাহা সহজেই অনুমেয়। অতএব বাঙ্গালীর হস্তলিখিত ইংলণ্ডের চিত্র দেখিবার আমাদের বড় বাসনা ছিল। এই লেখক বাঙ্গালী জাতির সেই বাসনা পূরাইয়াছেন, এজন্য আমরা তাঁহাকে ধন্যবাদ করি।
ইহা অবশ্য স্বীকার করিতে হইবে যে, লেখক ইউরোপ একটু অনুকূল চক্ষে দেখিয়াছেন। আমাদিগের দেশের লোকের চক্ষে যে ইউরোপ অতি আশ্চর্য দেশ বোধ হইবে, তাহাতে সংশয় নাই। যে দেশের জন কয়েক লোক মাত্র সমুদ্র লঙ্ঘন করিয়া পাঁচ সহস্র মাইল দূরে আসিয়া প্রত্যহ নূতন নূতন বিস্ময়কর কার্য করিতেছেন, তাঁহাদের স্বদেশ যে আমাদের নিকটে বিশেষ প্রশংসনীয় হইবে, তাহাতে সন্দেহ কি? অতএব যাঁহার স্বভাব দ্বেষবিশিষ্ট নহে, তিনিই ইংলণ্ডকে অনুকূল চক্ষে দেখিবেন, সন্দেহ নাই। তথাপি বিদেশে গেলে বিদেশের সকল বিষয় ভাল লাগে না। ইউরোপে কি কি আমাদিগের ভাল লাগে না, সেইটুকু শুনিবার জন্য আমাদিগের বিশেষ কৌতূহল আছে। এ গ্রন্থে সে আকাঙ্ক্ষা নিবারণ হয় না।





