অর্থ-ইহা বিষ্ণু প্রথমে পাইলেন। তিনি দেবতাদিগের শ্রেষ্ঠ হইলেন। তাই বলে, বিষ্ণু দেবতাদিগের শ্রেষ্ঠ যে, সেই বিষ্ণু, যজ্ঞ সেই। যে সেই যজ্ঞ, সেই আদিত্য।

পুনশ্চ তৈত্তিরীয়সংহিতায় “শিপিবিষ্ণায়” শব্দের এইরূপ ব্যাখ্যা আছে-“যজ্ঞো বৈ বিষ্ণুঃ পশবঃ শিপিঃ। যজ্ঞ এব পশুষু প্রতিতিষ্ঠতি।”72 ভট্ট ভাস্কর মিশ্রও লিখিয়াছেন, “যজ্ঞো বৈ বিষ্ণুঃ পশবঃ শিপিরিতি শ্রুতেঃ।”

অতএব শঙ্করাচার্য্যের কথা ঠিক-শ্রুতিতে যজ্ঞকে বিষ্ণু বলা হইয়াছে। কিন্তু কি অর্থে? একটা অর্থ হইতে পারে যে, বিষ্ণু যজ্ঞ, কেন না, সর্ব্বব্যাপী। ভট্ট ভাস্কর মিশ্রও তাই বলিয়াছেন। তিনি বলনে, “বিষ্ণুঃ পশবঃ শিপিরিতি শ্রুতে সর্ব্বপ্রাণাদ্যন্তর্যামিত্বেন প্রবিষ্ট ইত্যর্থঃ।”

এই গীতার ভিতর সন্ধান করিলেই পাওয়া যাইবে,-

“অহং ক্রতুরহং যজ্ঞঃ স্বধাহমমহমৌষধম্।
মন্ত্রোহহমহমেবাজ্যমহমগ্নিরহং হুতম্ ||”
                             গীতা, ৯অ, ১৬।

আমি ক্রতু, আমি যজ্ঞ, আমি স্বধা, আমি ঔষধ, আমি মন্ত্র, আমি ঘৃত, আমি অগ্নি, আমি হবন।

যদি তাই হয়, তবে বিষ্ণু যজ্ঞ, কিন্তু যজ্ঞ বিষ্ণু নহে। বিষ্ণু সর্ব্বময়, এজন্য তিনি মন্ত্র, তিনি ঘৃত, তিনি অগ্নি; কিন্তু মন্ত্রও বিষ্ণু নহে, ঘৃতও বিষ্ণু নহে, অগ্নিও বিষ্ণুও নহে। অতএব বিষ্ণু, যজ্ঞ, কিন্তু যজ্ঞ বিষ্ণু নহে, ইহা যদি সত্য হয়, তবে শঙ্করাচার্য্যের ব্যাখ্যা খাটে না।

যস্ত্বাত্মরতিরেব স্যাদাত্মতৃপ্তশ্চ মানবঃ।
আত্মন্যেব চ সন্তুষ্টস্তস্য কার্য্যং ন বিদ্যতে || ১৭ ||

যে মনুষ্যের আত্মাতেই রতি, যিনি আত্মতৃপ্ত, আত্মাতেই যিনি সন্তুষ্ট তাঁহার কার্য্য নাই। ১৭।

দ্বিবিধ মনুষ্য, এক ইন্দ্রিয়ারাম (১৫ শ্লোক দেখ), দ্বিতীয় আত্মারাম। যে আত্মজ্ঞাননিষ্ঠ সেই আত্মারাম; সাংখ্যযোগ তাহারই জন্য। এই শ্লোকে তাহারই কথা হইতেছে।

ইতিপূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে, কেহই কর্ম্ম না করিয়া ক্ষণমাত্র থাকিতে পারে না। কর্ম্ম ব্যতীত কাহারও জীবনযাত্রাও নির্ব্বাহ হয় না। আবার এখন বলা যাইতেছে যে, ব্যক্তিবিশেষের কর্ম্ম নাই। অতএব কর্ম্ম বা কার্য্য শব্দের বিশেষ বুঝিতে হইবে। বৈদিকাদি সকাম কর্ম্মই এখানে অভিপ্রেত। ভাবার্থ এই যে, যে আত্মতত্ত্বজ্ঞ, তাহার পক্ষে উপরিকথিত যজ্ঞাদির প্রয়োজন নাই।

নৈব তস্য কৃতেনার্থো নাকৃতেনেহ কশ্চন।
ন চাস্য সর্ব্বভূতেষু কশ্চিদর্থব্যপাশ্রয়ঃ || ১৮ ||

তাঁহার কর্ম্মের কোন প্রয়োজন নাই; এবং কর্ম্ম অকারণেও কোন প্রত্যবায় নাই। সর্ব্বভূতমধ্যে কাহারও আশ্রয় ইঁহার প্রয়োজন নাই। ১৮।

তস্মাদসক্তঃ সততং কার্য্যং কর্ম্ম সমাচর।
অসক্তো হ্যাচরন্ কর্ম্ম পরমাপ্লোতি পুরুষঃ || ১৯ ||

অতএব সতত অসক্ত হইয়া কর্ত্তব্য কার্য্য সম্পাদন করিবে। পুরুষ অসক্ত হইয়া কর্ম্ম করিলে মুক্তি লাভ করে। ১৯।

72 ইহা আমি Muir সংগ্রহ হইতে তুলিলাম। কিন্তু একটু সন্দেহের বিষয় আছে।