এই ইন্দ্রকেই উদাহরণস্বরূপ গ্রহণ করা যাউক। ইঁহার ইন্দ্র নাম হইল কোথা হইতে? কে নাম রাখিল? মনুষ্যে না তাঁর বাপ মায়ে? “তাঁর বাপ মায়ে,” এমন কথা বলিতেছি তাহার কারণ এই যে, তাঁহার বাপ মা আছেন, এ কথা ঋগ্বেদে আছে। তবে তাঁর বাপ মা কে, সে বিষয়ে ঋগ্বেদে বড় গোলযোগ। ঋগ্বেদে অনেক রকম বাপ মার কথা আছে। ঋগ্বেদে এক স্থানে মাত্র তিনি আদিত্য বলিয়া আখ্যাত হইয়াছেন। কিন্তু শেষ পৌরাণিক তত্ত্ব এই দাঁড়াইয়াছে যে, তিনি অদিতি ও কশ্যপের পুত্র। পুরাণেতিহাসে তাঁহার এই পরিচয়। এখন জিজ্ঞাস্য এই যে, অদিতি ও কশ্যপ-ইন্দ্রের অন্নপ্রাশনের সময় কি তাঁহার ঐ নাম রাখিয়াছিলেন?

আগে বুঝিয়া দেখা যাউক যে, ইন্দ্র অদিতি এবং কশ্যপের সন্তান কেন হইলেন? অদিতি কে, তাহা আমরা পূর্ব্বেই বুঝাইয়াছি-তিনি অনন্ত প্রকৃতি। আমরা যাহা বলিয়াছি, তাহার উপর দুই একজন বিলাতী পণ্ডিতের কথা হইলে বোধ হয় আমাদের দেশের অনেক বাবুর মনঃপূত হইবে। এই জন্য নোটে প্রথমতঃ আচার্য্য রোথের মত, দ্বিতীয়তঃ মাক্ষমূলরের মত উদ্ধৃত করিলাম।*

এই ত গেল দেবতাদিগের মা। এখন দেবতাদিগের বাপ কশ্যপের কিছু পরিচয় দিই। এখানে সাহেবদিগের সাহায্য পাইব না বটে, কিন্তু বেদের সাহায্য পাইব। কশ্যপ অর্থে কচ্ছপ। এ অর্থ বেদেও লেখে, আজিও অভিধানেও লেখে। এখন, কচ্ছপের আর একটা সংস্কৃত নাম কূর্ম্ম। আবার কূর্ম্ম শব্দ কৃ ধাতু হইতে নিষ্পন্ন হইতে পারে-কি প্রকারে নিষ্পন্ন হইতে পারে সে কচকচিতে আমাদের কাজ নাই-বৈদিক ঋষিরা তাহার দায়ী-অতএব যে করিয়াছে, সেই কূ। কূর্ম্ম হইতে হইতে কালক্রমে সেই কর্ত্তা আবার কশ্যপ হইল, কেন না-কূর্ম্ম কশ্যপ একার্থবাচক শব্দ। যিনি সকল করিয়াছেন, যিনি বেদে প্রজাপতি বা পুরুষ বলিয়া অভিহিত, তিনি কূর্ম্ম, তিনিই এই কশ্যপ। এখন বেদ হইতে ইহার প্রমাণ দিতেছি।

“স যৎ কূর্ম্মো নাম। এতদ্বৈ রূপং ধৃত্বা প্রজাপতিঃ প্রজা অসৃজত। যদসৃজত অকরোত্তৎ। যদকরোত্তস্মাৎ কূর্ম্মঃ। কশ্যপো বৈ কূর্ম্ম। তস্মদাহুঃ সর্ব্বাঃ প্রজাঃ কাশ্যপা ইতি।” শতপথব্রাহ্মণ ৭। ৪। ১। ৫

ইহার অর্থ-

“কূর্ম্ম নামের কথা বলা যাইতেছে।-প্রজাপতি এই রূপ ধারণ করিয়া প্রজা সৃজন করিলেন। যাহা সৃজন করিলেন, তাহা তিনি করিলেন (অকরোৎ), করিলেন বলিয়া তিনি কূর্ম্ম। কশ্যপও (অর্থাৎ কচ্ছপ) কূর্ম্ম। এই জন্য লোকে বলে, সকল জীব কশ্যপের বংশ।”

অতএব প্রজাপতি বা স্রষ্টাই কশ্যপ। গোড়ায় তাই। তার উপর উপন্যাসকারেরা উপন্যাস বাড়াইয়াছে।

* আচার্য্য রোথ বলেন-

“Aditi Eternity or the Eternal, is the element which sustains and is sustained by the Adityas. This conception, owing to the character of what it embraces, had not in the Vedas been carried out into a definite personification, though the beginnings of such are not wanting. *** This eternal and inviolable principle in which in which the Adityas live and which constitutes their essence is the Celestial Light.”

                                            মূর সাহেব কৃতানুবাদ।

২। মোক্ষমূলর বলেন-

“Aditi, an ancient God or Goddess, is in reality the earliest name invented to express the Infinite; not the Infinite as the result of a long process of abstract reasoning but the visible Infinite, visible by the naked eye, the endless expanse beyond the earth beyond the clouds beyond the sky.”

                                            Translations from the Rig-Veda. I, 230.

সায়নাচার্য্যের মত ভিন্ন প্রকার, কিন্তু তিনি জানেন যে, অদিতি চৈতন্যযুক্তা দেবী-বিশেষ নহেন। তিনি বলেন, “অদিতিং অখণ্ডনীয়াং ভূমিং দিতিং খণ্ডিতাং প্রজাদিকাং।” কেহ কেহ অদিতিকে পৃথিবী মনে করিতেন, তাহা পূর্ব্বে বলা হইয়াছে।