ধর্ম্মতত্ত্ব
গুরু। মন্দ নহে বটে। সম্প্রতি আচার্য্য সীলীর কথা শোন। আধুনিক ধর্ম্মতত্ত্বব্যাখ্যাকারদিগের মধ্যে তিনি এক জন শ্রেষ্ঠ। তাঁহার প্রণীত “Ecce Homo” এবং “Natural Relegion” অনেককেই মোহিত করিয়াছে। এ বিষয়ে তাঁহার একটি উক্তি বাঙ্গালি পাঠকদিগের নিকট সম্প্রতি পরিচিত হইয়াছে।* বাক্যটি এই-“The substance of Religion is Culture.” কিন্তু তিনি এক দল লোকের মতের সমালোচনকালে এই উক্তির দ্বারা তাঁহাদিগের মত পরিস্ফুট করিয়াছেন-এটি ঠিক তাঁহার নিজের মত নহে। তাঁহার নিজের মত বড় সর্ব্বব্যাপী। সে মতানুসারে রিলিজন “habitual and permanent admiration.” ব্যাখ্যাটি সবিস্তারে শুনাইতে হইল।
“The words Religion and Worship are commonly and conveniently appropriated to the feelings with which we regard God. But those feelings-love, awe, admiration, which together make up worship-are felt in various combinations for human beings, and even for inanimate objects. It is not exclusively but only par excellence that religion is directed towards God. When feelings of admiration are very strong and at the same time serious and permanent, they express themselves in recurring acts, and hence arises ritual, liturgy and whatever the multitude indentifies with religion. But without ritual, religion may exist in its elementary state and its elementary state of Religion is what may be described as habitual and permanent admiration.”
শিষ্য। এ ব্যাখ্যাটি অতি সুন্দর। আর আমি দেখিতেছি, মিল যে কথা বলিয়াছেন, তাহার সঙ্গে ইহার ঐক্য হইতেছে। এই “habitual and permanent admiration” যে মানসিক ভাব, তাহারই ফল, “strong and earnest direction of the emotions and desires towards and ideal object recognized as of the highest excellence.”
গুরু। এ ভাব, ধর্ম্মের একটি অঙ্গমাত্র।
যাহা হউক, তোমাকে আর পণ্ডিতের পাণ্ডিত্যে বিরক্ত না করিয়া অগুস্ত কোম্তের ধর্ম্মব্যাখ্যা শুনাইয়া, নিরস্ত হইব। এটিতে বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন; কেন না, কোম্ৎ নিজে একটি অভিনব ধর্ম্মের সৃষ্টিকর্ত্তা, এবং তাঁহার এই ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি স্থাপন করিয়াই তিনি সেই ধর্ম্ম সৃষ্টি করিয়াছেন। তিনি বলেন, “Religion, in itself expresses the state, of perfect unity which is the distinctive mark of man’s existence both as an individual and in society, when all the constituent parts of his nature, moral and physical, are made habitually to converge towards one common purpose. অর্থাৎ “Religion consists in regulating one’s individual nature, and forms the rallying-point for all the separate individuals.”
যতগুলি ব্যাখ্যা তোমাকে শুনাইলাম, সকলের মধ্যে এইটি উৎকৃষ্ট বলিয়া বোধ হয়। আর যদি এই ব্যাখ্যা প্রকৃত হয়, তবে হিন্দুধর্ম্ম সকল ধর্ম্মের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ধর্ম্ম।
শিষ্য। আগে ধর্ম্ম কি বুঝি, তার পর পারি যদি, তবে না হয় হিন্দুধর্ম্ম বুঝিব। এই সকল পণ্ডিতগণকৃত ধর্ম্মব্যাখ্যা শুনিয়া আমার সাত কাণার হাতী দেখা মনে পড়িল।
গুরু। কথা সত্য। এমন মনুষ্য কে জন্মগ্রহণ করিয়াছে, যে ধর্ম্মের পূর্ণ প্রকৃতি ধ্যানে পাইয়াছে? যেমন সমগ্র বিশ্বসংসার কোন মনুষ্য চক্ষে দেখিতে পায় না, তেমনই সমগ্র ধর্ম্ম কোন মনুষ্য ধ্যানে পায় না। অন্যের কথা দূরে থাক, শাক্যসিংহ, যীশুখ্রীষ্ট, মহম্মদ, কি চৈতন্য,-তাঁহারাও ধর্ম্মের সমগ্র প্রকৃতি অবগত হইতে পারিয়াছিলেন, এমন স্বীকার করিতে পারি না। অন্যের অপেক্ষা বেশি দেখুন, তথাপি সবটা দেখিতে পান নাই। যদি কেহ মনুষ্যদেহ ধারণ করিয়া ধর্ম্মের সম্পূর্ণ অবয়ব হৃদয়ে ধ্যান, এবং মনুষ্যলোকে প্রচারিত করিতে পারিয়া থাকেন, তবে সে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাকার। ভগবদ্গীতার উক্তি, ঈশ্বরাবতার শ্রীকৃষ্ণের উক্তি কি কোন মনুষ্যপ্রণীত, তাহা জানি না। কিন্তু যদি কোথাও ধর্ম্মের সম্পূর্ণ প্রকৃতি ব্যক্ত ও পরিস্ফুট হইয়া থাকে, তবে সে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায়।
* দেবী চৌধুরাণীতে।