ধর্ম্মতত্ত্ব
পশুদিগের মধ্যে গো হিন্দুদিগের বিশেষ প্রীতির পাত্র। গোরুর তুল্য হিন্দুর পরমোপকারী আর কেহই নাই। গোদুগ্ধ হিন্দুর দ্বিতীয় জীবন স্বরূপ। হিন্দু, মাংস ভোজন করে না। যে অন্ন আমরা ভোজন করি, তাহাতে পুষ্টিকর (nitrogeneous) দ্রব্য বড় অল্প, গোরুর দুগ্ধ না খাইলে সে অভাব মোচন হইত না। কেবল গোরুর দুগ্ধ খাইয়াই আমরা মানুষ এমন নহে; যে ধান্যের উপর আমাদের নির্ভুর, তাহার চাষও গোরুর উপর নির্ভর-গোরুই আমাদের অন্নদাতা। গোরু কেবল ধান্য উৎপাদন করিয়াই ক্ষান্ত নহে; তাহা মাঠ হইতে গোলায়, গোলা হইতে বাজারে, বাজার হইতে ঘরে বহিয়া দিয়া যায়। ভারতবর্ষের সমস্ত বহনকার্য্য গোরুই করে। গোরু মরিয়াও দ্বিতীয় দধিচীর ন্যায়, অস্থির দ্বারা, শৃঙ্গের দ্বারা ও চামড়ার দ্বারা উপকার করে। মূর্খে বলে, গোরু হিন্দুর দেবতা; দেবতা নহে, কিন্তু দেবতার ন্যায় উপকার করে। বৃষ্টিদেবতা ইন্দ্র আমাদের যত উপকার করে, গোরু তাহার অধিক উপকার করে। ইন্দ্র যদি পূজার্হ হয়েন, গোরুও তবে পূজার্হ। যদি কোন কারণে বাঙ্গালা দেশে হঠাৎ গোবংশ লোপ পায়, তবে বাঙ্গালি জাতিও লোপ পাইবে সন্দেহ নাই। যদি হিন্দু, মুসলমানের দেখাদেখি গোরু খাইতে শিখিত, তবে হয় এত দিন হিন্দু নাম লোপ পাইত, নয় হিন্দুরা অতিশয় দুর্দ্দশাপন্ন হইয়া থাকিত। হিন্দুর অহিংসা ধর্ম্মই এখানে হিন্দুকে রক্ষা করিয়াছে। অনুশীলনের ফল হাতে হাতে দেখ। পশুপ্রীতি অনুশীলিত হইয়াছিল বলিয়াই হিন্দুর এ উপকার হইয়াছে।
শিষ্য। বাঙ্গালার অর্দ্ধেক কৃষক মুসলমান।
গুরু। তাহারা হিন্দুজাতিসম্ভূত বলিয়াই হউক, আর হিন্দুর মধ্যে থাকার জন্যই হউক, আচারে তাহারা হিন্দু। তাহারা গোরু খায় না। হিন্দুবংশসম্ভূত হইয়া যে গোরু খায়, সে কুলাঙ্গার ও নারাধম।
শিষ্য। অনেক পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিত বলেন, হিন্দুরা জন্মান্তরবাদী; তাহারা মনে করে, কি জানি, আমাদের কোন্ পূর্ব্বপুরুষ দেহান্তর প্রাপ্ত হইয়া কোন পশু হইয়া আছেন, এই আশঙ্কায় হিন্দুরা পশুদিগের প্রতি দয়াবান্।
গুরু। তুমি পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিতে ও পাশ্চাত্ত্য গর্দ্দভে গোল করিয়া ফেলিতেছ। এক্ষণে হিন্দুধর্ম্মের মর্ম্ম কিছু কিছু বুঝিলে, এক্ষণে ডাক শুনিলে গর্দ্দভ চিনিতে পারিবে।