“যে যে-রূপে আমাকে আশ্রয় করে, আমি তাহাকে সেইরূপ ভজনা করি।” এবং স্থানান্তরে বলিয়াছেন,-

পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি।

তদহং ভক্ত্যুপহৃতশ্নামি প্রযতাত্মনঃ ||

“যে ভক্তিপূর্ব্বক আমাকে পত্র, পুষ্প, ফল, জল দেয়, তাহা প্রযতাত্মার ভক্তির উপহার বলিয়া আমি গ্রহণ করি।”

শিষ্য। তবে কি গীতায় সাকার মূর্ত্তির উপাসনা বিহিত হইয়াছে?

গুরু। ফল পুষ্পাদি প্রদান করিতে হইলে, তাহা যে প্রতিমায় অর্পণ করিতে হইবে, এমন কথা নাই। ঈশ্বর সর্ব্বত্র আছেন; যেখানে দিবে, সেইখানে তিনি পাইবেন।

শিষ্য। প্রতিমাদির পূজা বিশুদ্ধ হিন্দুধর্ম্মে নিষিদ্ধ, না বিহিত?

গুরু। অধিকারভেদে নিষিদ্ধ, এবং বিহিত। তদ্বিষয়ে ভাগবতপুরাণ হইতে কপিলোক্তি উদ্ধৃত করিতেছি। ভাগবতপুরাণে কপিল, ঈশ্বরের অবতার বলিয়া গণ্য। তিনি তাঁহার মাতা দেবহূতীকে নির্গুণ ভক্তিযোগের সাধন বলিতেছেন। এই সাধনের মধ্যে এক দিকে সর্ব্বভূতে ঈশ্বরচিন্তা, দয়া, মৈত্র, যম নিয়মাদি ধরিয়াছেন, আর এক দিকে প্রতিমা দর্শন, স্পর্শন, পূজাদি ধরিয়াছেন। কিন্তু বিশেষ এই বলিতেছেন,-

অহং সর্ব্বেষু ভূতেষু ভূতাত্মাবস্থিতঃ সদা।

‍‍‍‍ তমবজ্ঞায় মাং মর্ত্ত্যঃ ‍কুরুতেহর্চ্চাবিড়ম্বনং ||

যো মাং সর্ব্বেষু ভূতেষু সন্তমাত্মানমীশ্বরং।

হিত্মার্চচ্চাং ভজতে মৌঢ্যাদ্ভস্মন্যেব জুহোতি সঃ ||

                       ৩ বস্ক। ২৯ অ। ১৭।১৮

“আমি, সর্ব্বভূতে ভূতাত্মাস্বরূপ অবস্থিত আছি। সেই আমাকে অবজ্ঞা করিয়া (অর্থাৎ সর্ব্বভূতকে অবজ্ঞা করিয়া) মনুষ্য প্রতিমাপূজা বিড়ম্বনা করিয়া থাকে। সর্ব্বভূতে আত্মাস্বরূপ ঈশ্বর আমাকে পরিত্যাগ করিয়া যে প্রতিমা ভজনা করে, সে ভস্মে ঘি ঢালে।”

পুনশ্চ,

অর্চ্চাদাবর্চ্চয়েত্তাদীশ্বরং মাং স্বকর্ম্মকৃৎ।

যাবন্ন বেদ স্বহৃদি সর্ব্বভূতেষ্ববস্থিতং || ২৯ অ।২০

যে ব্যক্তি স্বকর্ম্মে রত, সে যত দিন না আপনার হৃদয়ে সর্ব্বভূতে অবস্থিত ঈশ্বরকে জানিতে পারে, তাবৎ প্রতিমাদি পূজা করিবে।

বিধিও রহিল, নিষেধও রহিল। যাহার সর্ব্বজনে প্রীতি নাই, ঈশ্বর জ্ঞান নাই, তাহার প্রতিমাদির অর্চ্চনা বিড়ম্বনা। আর যাহার সর্ব্বজনে প্রীতি জন্মিয়াছে, ঈশ্বর জ্ঞান জন্মিয়াছে, তাহারও প্রতিমাদি পূজা নিষ্প্রয়োজনীয়। তবে যত দিন সে জ্ঞান না জন্মে, তত দিন বিষয়ী লোকের পক্ষে প্রতিমাদি পূজা অবিহিত নহে; কেন না, তদ্দ্বারা ক্রমশঃ চিত্তশুদ্ধির জন্মিতে পারে। প্রতিমাপূজা গৌণ ভক্তির মধ্যে।

শিষ্য। গৌণ ভক্তি কাহাকে বলিতেছেন, আমি ঠিক বুঝিতেছি না।