ধর্ম্মতত্ত্ব
ভগবান্ কহিলেন, তাহা আছে ও থাকিবে। অন্য বর দিব, প্রার্থনা কর।”
প্রহ্লাদ দ্বিতীয় বর প্রার্থনা করিলেন, “আমি তোমার স্তুতি করিয়াছিলাম বলিয়া, পিতা আমার যে দ্বেষ করিয়াছিলেন, তাঁর সেই পাপ ক্ষালিত হউক।”
ভগবান্ তাহাও স্বীকার করিয়া, তৃতীয় বর প্রার্থনা করিতে আদেশ করিলেন। কিন্তু নিষ্কাম প্রহ্লাদের জগতে আর তৃতীয় প্রার্থনা ছিল না; কেন না, তিনি “সর্ব্বারম্ভপরিত্যাগী,-হর্ষ, দ্বেষ, শোক, আকাঙ্ক্ষাশূন্য, শুভাশুভপরিত্যাগী।”* তিনি আবার চাহিলেন, “তোমার প্রতি আমার ভক্তি যেন অব্যভিচারিণী থাকে।”
বর দিয়া বিষ্ণু অন্তর্হিত হইলেন। তার পর হিরণ্যকশিপু আর প্রহ্লাদের উপর অত্যাচার করেন নাই।
শিষ্য। তুলামানে এক দিকে বেদ, নিখিল ধর্ম্মশাস্ত্র, বাইবেল, কোরাণ আর এক দিকে প্রহ্লাদচরিত্র রাখিলে প্রহ্লাদচরিত্রই গুরু হয়।
গুরু। এবং প্রহ্লাদকথিত এই বৈষ্ণব ধর্ম্ম সকল ধর্ম্মের শ্রেষ্ঠ ধর্ম্ম। ইহা ধর্ম্মের সার, সুতরাং সকল বিশুদ্ধ ধর্ম্মেই আছে। যে পরিমাণে ধর্ম্ম বিশুদ্ধ, ইহা সেই পরিমাণে সেই ধর্ম্মে আছে। খৃষ্টধর্ম্ম, ব্রাহ্মধর্ম্ম এই বৈষ্ণব ধর্ম্মের অন্তর্গত। গড্ বলি, আল্লা বলি, ব্রহ্ম বলি, সেই এক জগন্নাথ বিষ্ণুকেই ডাকি। সর্ব্বভূতের অন্তরাত্মাস্বরূপ জ্ঞান ও আনন্দময় চৈতন্যকে যে জানিয়াছে, সর্ব্বভূতে যাহার আত্মজ্ঞান আছে, যে অভেদী, অথবা সেইরূপ জ্ঞান ও চিত্তের অবস্থা প্রাপ্তিতে যাহার যত্ন আছে, সেই বৈষ্ণব ও সেই হিন্দু। তদ্ভিন্ন যে কেবল লোকের দ্বেষ করে, লোকের অনিষ্ট করে, পরের সঙ্গে বিবাদ করে, লোকের কেবল জাতি মারিতেই ব্যস্ত, তাহার গলায় গোচ্ছা করা পৈতা, কপালে কপালজোড়া ফোঁটা, মাথায় টিকি, এবং গায়ে নামাবলি ও মুখে হরিনাম থাকিলেও, তাহাকে হিন্দু বলিব না। সে ম্লেচ্ছের অধিক ম্লেচ্ছ, তাহার সংস্পর্শে থাকিলেও হিন্দুর হিন্দুয়ানি যায়।
* সর্ব্বারম্ভপরিত্যাগী যো মদ্ভক্ত: স মে প্রিয়: ||
যো ন হৃষ্যতি ন দ্বেষ্টি ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি।
শুভাশুভপরিত্যাগী ভক্তিমান্ য: স মে প্রিয়: ||
যো ন হৃষ্যতি ন দ্বেষ্টি ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি।
শুভাশুভপরিত্যাগী ভক্তিমান্ য: স মে প্রিয়: ||