আরুরুক্ষোর্ম্মুনের্যোগং কর্ম্ম কারণমুচ্যতে। ৬।৩

যিনি জ্ঞানযোগে আরোহণেচ্ছু, কর্ম্মই তাঁহার তদারোহণের কারণ বলিয়া কথিত হয়। অতএব কর্ম্মানুষ্ঠানের দ্বারা জ্ঞান লাভ করিতে হইবে। এখানে ভগবদ্বাক্যের অর্থ এই যে, কর্ম্মযোগ ভিন্ন চিত্তশুদ্ধি জন্মে না। চিত্তশুদ্ধি ভিন্ন জ্ঞানযোগে পৌঁছান যায় না।

শিষ্য। তবে কি কর্ম্মের দ্বারা জ্ঞান জন্মিলে কর্ম্ম ত্যাগ করিতে হইবে?

গুরু। উভয়েরই সংযোগ ও সামঞ্জস্য চাই।

যোগসংন্যস্তকর্ম্মাণং জ্ঞানসংচ্ছিন্নসংশয়ম্।

আত্মবন্তং ন কর্ম্মাণিনিবধ্নান্তি ধনঞ্জয় || ৪।৪১

হে ধনঞ্জয়! কর্ম্মযোগের দ্বারা যে ব্যক্তি সংন্যস্তকর্ম্ম এবং জ্ঞানের দ্বারা যার সংশয় ছিন্ন হইয়াছে, সেই আত্মবান্‌কে কর্ম্মসকল বদ্ধ করিতে পারে না।

তবেই চাই (১) কর্ম্মের সংন্যাস বা ঈশ্বরার্পণ এবং (২) জ্ঞানের দ্বারা সংশয়চ্ছেদন। এইরূপে কর্ম্মবাদের, ও জ্ঞানবাদের বিবাদ মিটিল। ধর্ম্ম সম্পূর্ণ হইল। এইরূপে ধর্ম্মপ্রণেতৃশ্রেষ্ঠ, ভূতলে মহামহিমাময় এই নূতন ধর্ম্ম প্রচারিত করিলেন। কর্ম্ম ঈশ্বরে অর্পণ কর; কর্ম্মের দ্বারা জ্ঞান লাভ করিয়া পরমার্থতত্ত্বে সংশয় ছেদন কর। এই জ্ঞানও ভক্তিতে যুক্ত; কেন না,-

তদ্বুদ্ধয়স্তদাত্মানস্তন্নিষ্ঠাস্তৎপরায়ণাঃ।

গচ্ছন্ত্যপুনরাবৃত্তিং জ্ঞাননির্ধৃতকল্মষাঃ || ৫।১৭

ঈশ্বরেই যাহাদের বুদ্ধি, ঈশ্বরেই যাহাদের আত্মা, তাঁহাতে যাঁহাদের নিষ্ঠা, ও যাহারা তৎপরায়ণ, তাহাদের পাপসকল জ্ঞানে নির্ধূৎ হইয়া যায়, তাহারা মোক্ষ প্রাপ্ত হয়।

শিষ্য। এখন বুঝিতেছি যে, এই জ্ঞান ও কর্ম্মের সমবায়ে ভক্তি। কর্ম্মের জন্য প্রয়োজন-কার্য্যকারিণী ও শারীরিকী বৃত্তিগুলি সকলেই উপযুক্ত স্ফূর্ত্তি ও পরিণতি প্রাপ্ত হইয়া ঈশ্বরমুখী হইবে। জ্ঞানের জন্য চাই-জ্ঞানার্জ্জনী বৃত্তিগুলি ঐরূপ স্ফূর্ত্তি ও পরিণতি প্রাপ্ত হইয়া ঈশ্বরমুখী হইবে। আর চিত্তরঞ্জিনী বৃত্তি?

গুরু। সেইরূপ হইবে। চিত্তরঞ্জিনী বৃত্তি সকল বুঝাইবার সময়ে বলিব।

শিষ্য। তবে মনুষ্যে সমুদায় বৃত্তি উপযুক্ত স্ফূর্ত্তি ও পরিণতি প্রাপ্ত হইয়া ঈশ্বরমুখী হইলে, এই গীতোক্ত জ্ঞানকর্ম্মন্যাস যোগে পরিণত হয়। এতদুভয়ই ভক্তিবাদ। মনুষ্যত্ব ও অনুশীলনধর্ম্ম যাহা আমাকে শুনাইয়াছেন, তাহা এই গীতোক্ত ধর্ম্মের নূতন ব্যাখ্যা মাত্র।

গুরু। ক্রমে এ কথা আরও স্পষ্ট বুঝিবে।