“বেদবেদাঙ্গবিজ্ঞানাং বলং চাপ্যধিকং তথা।
নৃণাং লোকে হি কোহন্যোহস্তি বিশিষ্টঃ কেশবাদৃতে ||
                                মহাভারতম্, সভাপর্ব, ৩৮ অধ্যায়ঃ।

মহাভারতে কৃষ্ণের বেদজ্ঞতা সম্বন্ধে এইরূপ আরও ভূরি ভূরি প্রমাণ পাওয়া যায়। এই বেদজ্ঞতা স্বতঃলব্ধও নহে। ছান্দোগ্য উপনিষদে প্রমাণ পাইয়াছি যে, তিনি আঙ্গিরস-বংশীয় ঘোর ঋষির নিকট অধ্যয়ন করিয়াছিলেন।

সে সময় শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়দিগের উচ্চশিক্ষার উচ্চাংশকে তপস্যা বলিত। শ্রেষ্ঠ রাজর্ষিগণ কোন সময়ে না কোন সময়ে তপস্যা করিয়াছিলেন, এইরূপ কথা প্রায় পাওয়া যায়। আমরা এক্ষণে তপস্যা অর্থে যাহা বুঝি, বেদের অনেক স্থানেই দেখা যায় যে, তপস্যার প্রকৃত অর্থ তাহা নহে। আমরা বুঝি, তপস্যা অর্থে বনে বসিয়া চক্ষু বুজিয়া নিশ্বাস রুদ্ধ করিয়া পানাহার ত্যাগ করিয়া ঈশ্বরের ধ্যান করা। কিন্তু দেবতাদিগের মধ্যে কেহ কেহ এবং মহাদেবও তপস্যা করিয়াছিলেন, ইহাও কোন কোন গ্রন্থে পাওয়া যায়। বিশেষতঃ শতপথব্রাহ্মণে আছে যে, স্বয়ং পরব্রহ্ম সিসৃক্ষু হইলে তপস্যার দ্বারাই সৃষ্টি করিলেন, যথা—

সোহকাময়ত। বহুঃ স্যাং প্রজায়েয়েতি। স তপোহতপ্যত। স তপস্তপ্ত্বা ইদং সর্বমসৃজত।* অর্থ,—“তিনি ইচ্ছা করিলেন, আমি প্রজাসৃষ্টির জন্য বহু হইব। তিনি তপস্যা করিলেন। তপস্যা করিয়া এই সকল সৃষ্টি করিয়াছিলেন।”

এ সকল স্থানে তপস্যা অর্থে এই রকমই বুঝিতে হয় যে, চিত্ত সমাহিত করিয়া আপনার শক্তি সকলের অনুশীলন ও স্ফুরণ করিয়াছিলেন। মহাভারতে কথিত আছে যে, কৃষ্ণ দশ বৎসর হিমালয় পর্বতে তপস্যা করিয়াছিলেন। মহাভারতের ঐশিক পর্বে লিখিত আছে যে, অশ্বত্থামাপ্রযুক্ত ব্রহ্মশিরা অস্ত্রের দ্বারা উত্তরার গর্ভপাতের সম্ভাবনা হইলে, কৃষ্ণ সেই মৃতশিশুকে পুনরুজ্জীবিত করিতে প্রতিজ্ঞারূঢ় হইয়াছিলেন, এবং তখন অশ্বত্থামাকে বলিয়াছিলেন যে, তুমি আমার তপোবল দেখিবে।

আদর্শ মনুষ্যের শিক্ষা আদর্শ শিক্ষাই হইবে। ফলও সেইরূপ দেখি। কিন্তু সেই প্রাচীন কালের আদর্শ শিক্ষা কিরূপ ছিল, তাহা কিছুই জানিতে পারা গেল না, ইহা বড় দুঃখের বিষয়।

* ২ বল্লী, অনুবাক।