মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত
সাহেব চটিয়া, “টাহা আমি জানে-They eat, that I see-but who pays?-টাকা কাহাড়?”
এখন সে চাষা জানে যে, যত টাকা আসিতেছে, সকলই জমীদারের সিন্ধুকে যাইতেছে; সে নিজেও কিছু দিয়া আসিয়াছিল-অতএব এবার বিনা বিলম্বে উত্তর করিল, “টাকা জমীদারের |”
সাহেব। Ah! there it is; they do their duty-how it is that some people find pleasure in maligning them? জমীদারের নাম কি?
চাষা। মুচিরাম রায়।
সাহেব। কট ডিবস বোজন কড়িয়াছে?
চাষা। তা ধর্ম্মাবতার, প্রজারা, রোজ রোজ আসে, খাওয়া দাওয়া করে।
সাহেব। এ গ্ড়ামের নাম কি?
চাষা। চন্ননপুর।
সাহেব নোটবুক বাহির করিয়া তাহাতে পেন্সিলে লিখিলেন,
For Famine Report
“Babu Muchiram Ray, Zemindar of Chinnapur-feeds every day a large number of his ryots.”
সাহেব তখন ঘোড়ায় চাবুক মারিয়া টাপে চলিলেন। চাষা আসিয়া গ্রামে রটাইল, একটা সাহেব টাকায় আট আনা হিসাবে টেক্স বসাইতে আসিয়াছিল, চাষা মহাশয়ের বুদ্ধিকৌশলে বিমুখ হইয়াছে।
ঐ দিকে মীন্ওয়েল্ সাহেব যথাকালে ফেমিন্ রিপোর্টে লিখিলেন। একটা প্যারাগ্রাফ শুধু মুচিরাম রায় সম্বন্ধে। তাহাতে প্রতিপন্ন হইল যে, মুচিরাম জমীদারদিগের আদর্শস্থল। এই দুঃসময়ে অন্নদান করিয়া সকল প্রজাগুলির প্রাণরক্ষা করিয়াছে।
রিপোর্ট কমিশ্যনরীতে গেল। কমিশ্যনরের হস্ত হইতে কিছু উজ্জ্বলতর বর্ণে রঞ্জিত হইয়া-কমিশ্যনর সাহেব লেখক ভাল-গবর্ণমেণ্টে গেল। গবর্ণমেণটের এই বিবেচনা-যে যার প্রজা, সেই যদি দুর্ভিক্ষের সময়ে তাহাদের আহার যোগায়, তাহা হইলেই “দুর্ভিক্ষ প্রশ্নের” উত্তম মীমাংসা হয়। অতএব মুচিরামের ন্যায় বদান্য জমীদারদিগের সম্মানিত ও উৎসাহিত করা নিতান্ত কর্ত্তব্য। তজ্জন্য বাঙ্গালা গবর্ণমেণ্ট ভারতবর্ষীয় গবর্ণমেণ্টের নিকট অনুরোধ করিলেন যে, বাবু মুচিরাম রায় মহাশয়কে-পাঠক একবার হরি হরি বল-রাজাবাহাদুর উপাধি দেওয়া যায়।
ইণ্ডিয়ান গবর্ণমেণ্ট বলিলেন, তথাস্তু। গেজেট হইল, রাজা মুচিরাম রায় বাহাদুর। তোমরা সবাই আর একবার হরি বল।