যে অর্থে অহিন্দু হিন্দু হইতে পারে বলা গিয়াছে, সে অর্থে এখনও অনেক অনার্য্য জাতি হিন্দু হইতেছে।
অনার্য্যজাতি যে আপনাদিগের অনার্য্যভাষা পরিত্যাগ করিয়া আর্য্যভাষা ও আর্য্যধর্ম্ম গ্রহণপূর্ব্বক হিন্দু হইয়াছে, তাহার কয়েকটি উদাহরণ দিতেছি।
প্রথম। হাজারিবাগ প্রদেশে বিদ্যা নামে একটি জাতি বাস করে। বেদিয়া হইতে তাহারা পৃথক্। বিদ্যামাহাত্ম্য নাম তাহারা কখন কখন ধারণ করিয়া থাকে। ইহারা হিন্দি ভাষা কয় এবং হিন্দুমধ্যে গণ্য; কিন্তু এই বিদ্যাগণ মুণ্ডজাতীয় কোল, তাহাতে কোন সংশয় নাই। চুটীয়া নাগপুরের মুণ্ডদিগের যেরূপ আকৃতি, ইহাদিগেরও সেইরূপ আকৃতি। মুণ্ডদিগের মধ্যে পহন নামে এক একজন পুরোহিত বা গ্রাম্য কর্ম্মচারী সর্ব্বত্র দেখা যায়, বিদ্যাগণের মধ্যেও ঐরূপ গ্রামে গ্রামে পহন আছে। মুণ্ডেরা লোহা প্রস্তুত করিতে সুদক্ষ এবং সেই ব্যবসায় অবলম্বন করিয়া থাকে। বিদ্যাগণও সেই কাজে সুদক্ষ ও সুব্যবসায়ী। আর মুণ্ডদিগের মধ্যে কিলী অর্থাৎ জাতিবিভাগ আছে, ইহাদিগেরও সেইরূপ আছে। মুণ্ডদিগের কিলীর যে যে নাম, বিদ্যাদিগের কিলীরও সেই সেই নাম। অতএব ইহা এক প্রকার নিশ্চয় করা যাইতে পারে যে, বিদ্যাগণ মুণ্ড কোল। কিন্তু এখন তাহারা হিন্দিভাষা বলে ও হিন্দুধর্ম্ম অবলম্বন করিয়া চলে।*
দ্বিতীয়। আসামে চুটীয়া নামে এক জাতি আছে। তাহাদের মুখাবয়ব অনার্য্যের ন্যায়। কোন আসামী বুরুঞ্জীতে কর্ণেল্ ডাল্টন্ দেখিয়াছেন যে, উত্তরপ্রদেশস্থ পর্ব্বত হইতে তাহারা উপর আসামে প্রবেশ করিয়া সুবলেশ্বরী পার হইয়া সদীয়াপ্রদেশে বাস করে। লকিমপুরপ্রদেশে দিক্রু নদীর উপরে, এবং উপর আসামের অন্যত্র দেউরী চুটীয়া নামে এক চুটীয়াজাতি পাওয়া গিয়াছে। তাহাদিগের ভাষা সমালোচনা করিয়া স্থির হইয়াছে যে, ঐ চুটীয়া ভাষা গারো ও বোড়োদিগের ভাষার সঙ্গে একজাতীয়। অতএব চুটীয়ারা যে অনার্য্যজাতি, তদ্বিষয়ে সংশয় নাই। কিন্তু এক্ষণে আসামের অধিকাংশ চুটীয়া হিন্দু বলিয়া গণ্য। এবং তাহারা আপনারাও হিন্দু চুটীয়া বলিয়া আপনাদিগের পরিচয় দেয়। হিন্দু চুটীয়া বলিলেই বুঝাইবে যে, ম্লেচ্ছ চুটীয়া ছিল বা আছে।#
তৃতীয়। কাছাড়িরা অনার্য্যবংশ। তাহাদের অবয়ব মোঙ্গলীয়। কিন্তু আসাম প্রদেশীয় কাছাড়িয়া হিন্দু হইয়াছে। এবং এক্ষণেও অনেকে হিন্দু হইতেছে।
চতুর্থ। কোচেরা আর একটি অনার্য্যজাতি। আসল কোচভাষা মেছ কাছাড়িভাষা সদৃশ, কিন্তু ঐতিহাসিক সময়েই কোচবেহারের রাজাদিগের আদিপুরুষ হুজুর পৌত্র বিসু সিং হিন্দুধর্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন। এবং তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে কোচবেহারের যত ভদ্রলোক হিন্দুধর্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন। ইঁহারা রাজবংশী নাম গ্রহণ করিলেন। ইতর কোচেরা মুসলমান হইল।!
পঞ্চম। ত্রিপুরার পাহাড়ি লোক অনার্য্যজাতি। কিন্তু তাহারাও হিন্দুধর্ম্ম অবলম্বন করিয়াছে।@
ষষ্ঠ। খাড়োয়ার নামক অনার্য্যজাতি কালীপূজা করিয়া থাকে।$
সপ্তম। পহেয়া নামে পালামৌতে এক জাতি আছে, তাহারা হিন্দীভাষা কয় এবং কতকগুলি আচার ব্যবহার তাহাদের হিন্দুদিগের ন্যায়। তাহাদের অনার্য্যত্ব নিঃসন্দেহ।
অষ্টম। সর্গুজায় কিসান বলিয়া এক জাতি আছে, তাহারাও অনার্য্য এবং তাহাদিগের আচার ব্যবহার সব কোলের ন্যায়, তাহাদেরও ভাষা হিন্দী এবং তাহারা কতক কতক হিন্দু আচার ব্যবহার গ্রহণ করিয়াছে।&
# Statistical Account of Bengal, Vol. XVI, pp. 82-83.
! Dalton’s Ethnology, p. 78.
@ Buchanan Hamilton-Rungpur, Vol. III, p. 419. Hodgson I. A. S. B., XXXI, July 1849.
$ Dalton’s Ethnology, p. 130.
& Dalton’s Ethnology, p. 132.





