এইরূপ বর্ণনায় নিশ্চিত বুঝা যায় যে, যাহাদিগের কথা হইতেছে, তাহারা আর্য্য হইতে ভিন্নজাতীয়, ভিন্নধর্ম্মী, ভিন্নদেশী এবং ভিন্নভাষী—এবং আর্য্যদিগের পরমশত্রু। আর্যেরা ভারতবর্ষে প্রথম আসিয়া ইহাদিগের সম্মুখীন হইয়াছিলেন। ইহারা অবশ্য অনার্য্য।
বেদের অনেক পরে মন্বাদি স্মৃতি। মনুতে পাওয়া যায় যে, মনুসংহিতা সঙ্কলনকালে আর্য্যদিগের চারি পার্শ্বে অনার্য্যেরা ছিল। মনুতে তাহারা ভ্রষ্টক্ষত্রিয় বলিয়া বর্ণিত আছে। আচারভ্রংশ হেতু বৃষলত্ব প্রাপ্ত বলিয়া কথিত হইয়াছে। যথা—
বৃষলত্বং গতা লোকে ব্রাহ্মণাদর্শনেন চ||
পৌণ্ড্রকাশ্চৌড্রদ্রবিড়াঃ কাম্বোজা যবনাঃ শকাঃ।
পারদা পহ্ণাবাশ্চৈনাঃ কিরাতা দরদাঃ খসাঃ||”
ইহাদিগের মধ্যে যবন পহ্ণব আর্য্য, অবশিষ্ট অনার্য্য। ইহা ভাষাতত্ত্ব-প্রদত্ত প্রমাণদ্বারা স্থাপিত হইয়াছে।
মনু ও মহাভারত হইতে এইরূপ অনেক অনার্য্যজাতির তালিকা বাহির করা যাইতে পারে। তাহাতে অন্ধ্র, পুলিন্দ, সবর, মূতিব ইত্যাদি অনার্য্যজাতির নাম পাওয়া যায়। এবং মহাভারতের সভাপর্ব্বে উহারাই দস্যু নামে বর্ণিত হইয়াছে। যথা—
দীর্ঘকূর্চ্চৈমহী কীর্ণা বিবর্হৈরণ্ডজৈরিব||”
ইহারা যে পরিশেষে আর্য্যের নিকট পরাজিত হইয়াছিল, তাহাও নিশ্চিত। পরাজিত হইয়াই উহারা, যে যেখানে বন্য ও পার্ব্বত্য প্রদেশ পাইয়াছিল, সে সেইখানেই আশ্রয় গ্রহণ করিয়া আত্মরক্ষা করিয়াছিল। সেই সকল প্রদেশ দুর্ভেদ্য,—আর্য্যেরাও সে সকল কুদেশ অধিকারে তাদৃশ ইচ্ছুক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না; সুতরাং সেখানে আত্মরক্ষা সাধ্য হইল। কোন কোন স্থান—যথা দ্রাবিড়, আর্য্যের অধিকৃত হইলেও অনার্য্যেরা তথায় বাস করিতে লাগিল, আর্য্যেরা কেবল প্রভু হইয়া রহিলেন।* আর্য্যাবর্ত্তের সাধারণ লোক আর্য্য—দাক্ষিণাত্যে সাধারণ লোক অনার্য্য। আর্য্যাবর্ত্ত ও দাক্ষিণাত্য তুল্যরূপে আর্য্যাধিকৃত দেশ, তবে আর্য্যাবর্ত্তের ও দাক্ষিণাত্যের ভিন্ন অবস্থা কেন ঘটিল, এ প্রস্তাবে সে কথার আলোচনা নিষ্প্রয়োজনীয়।# ভারতবর্ষে আর্য্য ও অনার্য্যের সামঞ্জস্য একরকমে ঘটে নাই। আমরা তিন প্রকার অবস্থা দেখিতে পাই।
# মূরের দ্বিতীয় খণ্ডে তৃতীয় পরিচ্ছেদে ধৃত মন্ত্রসকল দেখ-ইহার ভূরি ভূরি প্রমাণ পাইবে। এখানে সে সকল উদ্ধৃত করা নিষ্প্রয়োজন মনে করি।





