ছেলে। দিবিনে বেটি, (ইতি প্রহার এবং কলসী ধ্বংস)

(পরে ছেলের বাপ সেই রঙ্গভূমে উপস্থিত)

বাপ। এ কি রে বাঁদর?

ছেলে। কেন, বাবা! এ যে আমার মা। মার সঙ্গে যেমন করি, ওর সঙ্গেও তেমনি করেছি-“মাতৃবৎ পরদারেষু |” কই মাগি, বাবাকে দেখে তুই ঘোমটা দিলি নে?

(২)

ময়রা আসিয়া ছেলের বাপের কাছে নালিশ করিল যে, ছেলের জ্বালায় আর দোকান করা ভার, ছেলে দোকান লুঠ করিয়া সকল মিঠাই মণ্ডা লইয়া আসে। গোয়ালা আসিয়া ক্ষীর ছানা সম্বন্ধে সেইরূপ নালিশ করিল।

বাপ তখন ছেলেকে ধরিয়া আনিয়া প্রহার আরম্ভ করিলেন। ছেলে বলিল, “মার কেন বাবা?”

বাপ । মার্‌ব না? তুই পরের দ্রব্য সামগ্রী লুটে পুটে আনিস্।

ছেলে। বাবা চোরের ভয় হয়েছে, তাই ঢিল কুড়িয়ে জমা করেছি-পরের সামগ্রী ত ঢিল।

(৩)

সরস্বতীপূজা উপস্থিত। বাপ প্রাতঃকালে ছেলেকে বলিলেন, “যা, একটা ডুব দিয়ে এসে অঞ্জলি দে-নহিলে খেতে পাবিনে |”

ছেলে। খেয়ে দেয়ে বিকেলে অঞ্জলি দিলে হয় না?

বাপ । তাও কি হয়? খেয়ে কি অঞ্জলি দেওয়া হয় রে পাগল?

ছেলে। তবে এ বছরের অঞ্জলি আর বছরে একেবারে দিলে হয় না? এবার বড় শীত।

বাপ । তা হয় না-সরস্বতীকে অঞ্জলি না দিলে কি বিদ্যা হয়?

ছেলে। একটা বছর কি ধারে বিদ্যা হয় না?

বাপ । দূর মূর্খ! যা, ডুব দিয়ে আস্‌গে যা। অঞ্জলি দেওয়া হ’লে দুটো ভাল সন্দেশ দেব এখন।

“আচ্ছা” বলিয়া ছেলে নাচিতে নাচিতে ডুব দিতে গেল। বড় শীত-তেমনি বাতাস-জল কন্‌কনে। তখন ছেলে ভাবিয়া চিন্তিয়া, ঘাটে একটা পাঁচ বছরের ছেলে রহিয়াছে দেখিয়া, তাহাকে ধরিয়া, গোটা দুই চুবানি দিল। তারপর তাকে জল হইতে তুলিয়া টানিয়া বাপের কাছে ধরিয়া আনিল। “বাবা‌‌! নেয়ে এসেছি |”

বাপ । কই বাপু,-কই নেয়েছ?

ছেলে। এই যে বাগ্‌দীর ছোঁড়াটাকে চুবিয়ে এনেছি।

বাপ । বড় কাজই করেছ-তুই নেয়ে এসেছিস্ কই?

ছেলে। বাবা, “আত্মবৎ সর্ব্বভূতেষু”-ওতে আমাতে কি তফাৎ আছে? ওর নাওয়াতেই আমার নাওয়া হয়েছে। এখন সন্দেশ দাও।

পিতা বেত্রহস্তে পুত্রের পিছু পিছু ছুটিলেন। পুত্র পলাইতে পলাইতে বলিতে লাগিল, “বাবা শাস্ত্র জানে না |”

কিছু পরে সেই সুশিক্ষিত বালকের পিতা শুনিলেন যে, সে ওপাড়ায় শিরোমণি ঠাকুরের টোলে গিয়া শিরোমণি ঠাকুরকে বিলক্ষণ প্রহার করিয়াছে। ছেলে ঘরে এলে পিতা জিজ্ঞাসা করিলেন, “আবার এ কি করেছিস?”

ছেলে। কি করি বাবা! তুমি ত ছাড়বে না-বেত মারিবেই মারিবে। তাই আপনা আপনি সেই বেত খেয়েছি।

পি। সে কি রে বেটা?-আপনা আপনি কি? শিরোমণি ঠাকুরকে মেরেছিস্ যে?

ছেলে। বাবা-আত্মবৎ সর্ব্বভূতেষু-শিরোমণি ঠাকুরে আর আমাতে কি আমি তফাৎ দেখি?

পিতা প্রতিজ্ঞা করিলেন, ছেলেকে আর লেখাপড়া শিখাইবেন না।