গৌরদাস বাবাজির ভিক্ষার ঝুলি
১। রামবল্লভবাবুর ভিক্ষাদান *

আমি বাবাজির চেলা, এবং ভিক্ষার ঝুলির বর্ত্তমান অধিকারী। বাবাজির গোলোকপ্রাপ্তি হইয়াছে। তিনি ভিক্ষা করিয়া নানা রত্ন আহরণ করিয়াছিলেন, কিন্তু আমি ভিন্ন আর কেহ তাঁহার উত্তরাধিকারী না থাকায়, আমাকে সেগুলি দিয়া গিয়াছেন। আমিও খয়রাৎ করিব ইচ্ছা করিয়াছি। আগে নমুনা দেখাই।

একদা বাবাজির সঙ্গে রামবল্লভবাবুর বাড়ী ভিক্ষা করিতে গিয়াছিলাম। আমরা “রাধে গোবিন্দ” বলিয়া দ্বারদেশে দাঁড়াইলাম। রামবল্লভপুর ব্যঙ্গ করিয়া বলিলেন, “বাবাজি! একবার হরিনাম কর!”

আমি মনে মনে ভাবিতেছিলাম, রামবল্লভবাবু হরিনামের কি ধার ধারেন! কিন্তু হরিপ্রেমে গদগদ বাবাজি তখনি একতারা বাজাইয়া আরম্ভ করিলেন, “তুমি কোথায় হে! দয়াময় হরি! একবার দেখা দাও হরি!—”

গীত আরম্ভ হইতেই সেই বাবু মহাশয় রঙ্গ করিয়া বাবাজিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার হরি কোথায়, বাবাজি?”

আমি মনে করিলাম, প্রহ্লাদের মত উত্তর দিই, “এই স্তম্ভে |” ইচ্ছা করিলাম, প্রভু স্তম্ভ হইতে নির্গত হইয়া দ্বিতীয় হিরণ্যকশিপুর মত এই বাবুটাকে ফাড়িয়া ফেলুন—নরসিংহের হস্তে নরবানরের ধ্বংস দেখিয়া চক্ষু তৃপ্ত করি। কিন্তু আমি প্রহ্লাদ নহি, চুপ করিয়া রহিলাম। বাবাজি বিনীতভাবে উত্তর করিলেন, “হরি কোথায়?” তা আমি কি জানি! জানিলে কি তোমার কাছে আসি? তাঁহারই কাছে যাইতাম |”

রামবল্লভ। তবু তাঁর একটা থাক্‌বার যায়গা কি নাই? হরির একটা বাড়ী ঘর নাই?

বাবাজি। আছে বৈ কি? তিনি বৈকুণ্ঠে থাকেন।

বাবু। বৈকুণ্ঠ এখান থেকে কত দূর, বাবাজি?

বাবাজি। তোমার আমার নিকট হইতে অনেক দূর।

বাবু। নিকট তবে কার?

বাবাজি। যাহার কুণ্ঠা নাই।

বাবু। কুণ্ঠা কি?

বাবাজি। বুঝেছি—কালেজের সাহেবরা টাকাগুলো ঠকাইয়া লইয়াছে—আমাকে দিলে বেশী উপকার হইত, হরিনাম শিখাইতাম। এখন অভিধান খোল।

বাবু। ঘরে অভিধান নাই। এক জন চাহিয়া লইয়া গিয়াছে।

বাবাজি। অভিধান তোমার কখন ছিল না, এ কথা স্বীকার করিতে অত কুণ্ঠিত হইতেছ কেন?

* প্রচার, ১২৯১, পৌষ।