বিবিধ প্রবন্ধ, প্রথম খণ্ড - প্রাচীন ভারতবর্ষের রাজনীতি
“নির্দ্দিষ্ট সময়ে সেনাদিগের বেতনাদি প্রদানে ত বিমুখ হয়েন না? তাহা হইলে সুচারুরূপে কার্য্য নির্ব্বাহ হওয়া দূরে থাকুক, প্রত্যুত তাহাদিগের দ্বারা পদে পদে অনিষ্ট ঘটনা ও বিদ্রোহের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা হইয়া উঠে।“
এই নীতির বিপরীতাচরণ কার্থেজ রাজ্য লোপের মূল। একা রোম কার্থেজ ধ্বংস করে নাই।
“সৎকুলজাত প্রধান প্রধান লোক ত তোমার প্রতি অনুরক্ত রহিয়াছে? তাহারা ত তোমার নিমিত্ত রণক্ষেত্রে প্রাণ পরিত্যাগ করিতেও সম্মত আছে?”
এই নীতির অবজ্ঞায় ষ্টুয়ার্ট বংশ নষ্ট হয়েন। ভারতবর্ষীয় ইংরেজ রাজপুরুষেরা ইহা বিলক্ষণ বুঝেন। বুঝিয়া, কর্ণওয়ালিশ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন ও ক্যানিং ভারতীয় রাজগণকে পোষ্যপুত্র লইতে অনুমতি দিয়াছেন। লর্ড লিটন আর কিছু করিতে না পারিয়া উপাধি বিতরণ করিয়াছেন।
পরে নারদ পেনশ্যন দেওয়ার পরামর্শ দিতেছেন,
“মহারাজ! যাহারা কেবল আপনার উপকারের নিমিত্ত কালকবলে নিপতিত যৎপরোনাস্তি দুর্দ্দশাগ্রস্ত হইয়াছে, তাহাদিগের পুত্র কলত্র প্রভৃতিকে ত ভরণপোষণ করিতেছেন?”
ক্ষিপ্রকারিতার বিষয়ে-
“শত্রুকে ব্যসনাসক্ত দেখিয়া স্বীয় মন্ত্র, কোষ ও ভৃত্য, ত্রিবিধ বল সম্যক্ বিবেচনা করিয়া, অবিলম্বে তাহাকে ত আক্রমণ করেন?”
অতি প্রধান রাজ্যাধ্যক্ষেরা এ তত্ত্ব সম্যক্ বুঝিয়াছিলেন। “অবিলম্বে” কাহাকে বলে, প্রথম নাপোলিয়ান বুঝিতেন। তাঁহার রণজয় সই বুদ্ধির ফল। তৃতীয় নাপোলিয়ন “অবিলম্বে” প্রূসীয়দিগকে আক্রমণ করিতে গিয়াছিলেন বটে, কিন্তু প্রথম নাপোলিয়নের মত “মন্ত্র; কোষ ও ভৃত্য” ত্রিবিধ বলের সম্যক্ বিচার না করিয়াই আক্রমণ করিয়াছিলেন। তিনি নারদবাক্যে অবহেলা করিয়া নষ্ট হইলেন।
পরে সমদৃষ্টি পক্ষে,—
“যেমন পিতা মাতা সকল সন্তানকে সমান স্নেহ করেন, তদ্রূপ আপনি ত সমদৃষ্টিতে সমুদ্র-মেখলা সমুদয় পৃথিবী অবলোকন করিতেছেন?” ইংরেজেরা ভারতবর্ষে এই নারদীয় বাক্য মনোযোগপূর্ব্বক অধ্যয়ন করুন।
নিম্নলিখিত কথাটি বিস্মার্কের যোগ্য;—
“সৈন্যদিগের ব্যবসায় জয়লাভসামর্থ্য বুঝিয়া, তাহাদিগকে ত অগ্রিম বেতন প্রদানপূর্ব্বক উপযুক্ত সময়ে যাত্রা করিয়া থাকেন?”
নিম্নলিখিত কথাটির আমরা অনুমোদন করি না, কিন্তু চতুর্দ্দশ লুই শুনিলে অনুমোদন করিতেন,-
“পরস্পরের ভেদ উপস্থিত করিবার নিমিত্ত শত্রুপক্ষীয় প্রধান প্রধান সৈন্যদিগকে ত যথাযোগ্য ধনদান করেন?”
নিম্নলিখিত কথাগুলি গ্রেগরি বা ইগ্নেশ্যস লয়লার যোগ্য—
“স্বয়ং জিতেন্দ্রিয় হইয়া আত্মপরাজয়পূর্ব্বক, ইন্দ্রিয়পরতন্ত্র প্রমত্ত বিপক্ষদিগকে ত পরাজয় করিতেছেন?”
পরে,—
“বিপক্ষের রাজ্য আক্রমণকালে আপন অধিকার ত দৃঢ়রূপে সুরক্ষিত করেন?”
পৃথিবীতে যত সৈনিক জন্মিয়াছেন, তন্মধ্যে হানিবল একজন অত্যুৎকৃষ্ট। কিন্তু তিনি এই কথা বিস্মৃত হওয়াতে সব হারাইয়াছিলেন। তিনি যখন ইতালিতে অনিবার্য্য, সিপিও তখন আফ্রিকাতে সৈন্য লইয়া গিয়া তাঁহার কৃত রণজয়সকল বিফল করিয়াছিলেন।