লোকরহস্য
এ বৎসরে ফাইন্যান্সিয়ল ডিপার্টমেণ্টের কাণ্ড অতি বিচিত্র-আমরা শ্রুত হইয়াছি যে, গবর্ণমেণ্টের আয়ও হইয়াছে, ব্যয়ও হইয়াছে। ইহা বিস্ময়কর হউক বা না হউক, বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, ইহাতে গবর্ণমেণ্টের টাকা, হয় কিছু উদ্বৃত্ত হইয়াছে, নয় কিছু অকুলান হইয়াছে, নয় ঠিক ঠিক মিলিয়া গিয়াছে। আগামী বৎসর (৭৬ সালে) টেক্স বসিবে কি না, তাহা এক্ষণে বলা যায় না, কিন্তু ভরসা করি, ৭৭ সালের এপ্রিল মাসে আমরা এ কথা নিশ্চিত বলিতে পারিব।
এবার বিচারালয় সকলের কার্য্যের আমরা বিশেষ সুখ্যাতি করিতে পারিলাম না। সত্য বটে যে, যে নালিশ করিয়াছে, তাহার বিচার হইয়াছে বা হইবে, এমন উদ্যোগ আছে, কিন্তু যাহারা নালিশ করে নাই, তাহাদের পক্ষে কোন বিচার হয় নাই। আমরা ইহা বুঝিতে পারি না; যেখানে সাধারণ বিচারালয়, সেখানে নালিশ করুক বা না করুক, বিচার চাই। কেহ রৌদ্র চাহুক বা না চাহুক, সূর্য্যদেব সর্ব্বত্র রৌদ্র করিয়া থাকেন, কেহ বৃষ্টি চাহুক বা না চাহুক, মেঘ ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে বৃষ্টি করিয়া থাকেন, এবং কেহ বিচার চাহুক বা না চাহুক, বিচারকের উচিত, গৃহে গৃহে ঢুকিয়া বিচার করিয়া আসেন। যদি কেহ বলেন যে, বিচারকগণ এরূপ বিচারার্থ গৃহে গৃহে প্রবেশ করিতে গেলে গৃহস্থগণের সম্মার্জ্জনী সকল অকস্মাৎ বিঘ্ন ঘটাইতে পারে, তাহাতে আমাদের বক্তব্য যে, গবর্ণমেণ্টের কর্ম্মচারিগণ সম্মার্জ্জনীকে তাদৃশ ভয় করেন না–সম্মার্জ্জনীর সঙ্গে নিম্নশ্রেণীর হাকিমদিগের বিলক্ষণ পরিচয় আছে এবং প্রায় প্রত্যহ ইহার সঙ্গে তাঁহাদের আলাপ হইয়া থাকে। যেমন ময়ূর সর্পপ্রিয়, ইঁহারাও তেমনি সম্মার্জ্জনীপ্রিয়-দেখিলেই প্রায় ভক্ষণ করিয়া থাকেন। আমরা এমনও শুনিয়াছি যে, গবর্ণমেণ্টের কোন অধস্তন কর্ম্মচারী প্রস্তাব করিয়াছেন যে, যেমন উচ্চশ্রেণীর কর্ম্মচারিগণের পুরস্কারের জন্য “অর্ডর অব দি ষ্টার অব ইণ্ডিয়া” সংস্থাপিত করা হইয়াছে, সেইরূপ নিম্নশ্রেণীর কর্ম্মচারিগণের জন্য “অর্ডর অব দি ব্রুম্ষ্টিক্” সংস্থাপিত করা হউক। এবং বিশেষ বিশেষ গুণবান্ ডিপুটি এবং সবজজ প্রভৃতিকে বাছিয়া বাছিয়া লাকলাইনের দড়িতে এই মহারত্নটিকে বাঁধিয়া তাঁহাদিগের গলদেশে লম্বমান করিয়া দেওয়া হউক। তাঁহাদের চাপকান চেন চাদরবিভূষিত সদাকম্পবান্ বক্ষে ইহা অপূর্ব্ব শোভা ধারণ করিবে। রাজপ্রসাদস্বরূপ প্রদত্ত হইলে ইহা যে সাদরে গৃহীত হইবে, তাহা আমরা শপথ করিয়া বলিতে পারি। আমাদের কেবল আশঙ্কা এই যে, এত উমেদওয়ার যুটিবে যে, ঝাঁটার সঙ্কুলান করা ভার হইবে।
গত বৎসর সুবৃষ্টি হইয়াছিল। কিন্তু সর্ব্বত্র সমান হয় নাই। ইহা মেঘদিগের পক্ষপাত বটে। যে সকল দেশে বৃষ্টি হয় নাই, সে সকল দেশের লোকে গবর্ণমেণ্টে এই মর্ম্মে আবেদন করিয়াছেন, যে, ভবিষ্যতে যাহাতে সর্ব্বত্র সমান বৃষ্টি হয়, এমন কোন উপায় উদ্ভূত হউক। আমাদিগের বিবেচনায় ইহার সদুপায় নিরূপণ জন্য একটি কমিটি সংস্থাপিত করা উচিত। কোন কোন মান্য সহযোগী বলেন যে, যদি সরকার হইতে মেঘদিগের বারবরদারি বরাদ্দ হয়, তাহা হইলে তাহাদিগের কোন দেশেই যাইবার আর আপত্তি থাকে না। কিন্তু আমাদিগের বিবেচনায় ইহাতেও সুবিধা হইবে না-কেন না, বঙ্গদেশের মেঘসকল অত্যন্ত সৌদামিনীপ্রিয়-সৌদামিনীগণকে ছাড়িয়া টাকার লোভেও দেশদেশান্তরে যাইতে স্বীকার করিবে না। আমরা প্রস্তাব করি যে, মেঘ সকল এবালিশ করিয়া দিয়া, ভিস্তীর বন্দোবস্ত করা হউক। ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে এক একজন চাপরাশী বা সুযোগ্য ডিপুটি এক একজন ভিস্তীকে দীর্ঘ বংশখণ্ডে বাঁধিয়া ঊর্দ্ধ্বে উত্থিত করিয়া তুলিয়া ধরিবেক, ভিস্তী তথা হইতে ক্ষেত্রে জল ছড়াইয়া, পারে ত নামিয়া আসিবে। ভাল হয় না?