লোকরহস্য
শ্যামী। তা ভাই ভিম্রুল আঁবের বোল দেখে পাগল হয় কেন? ভিম্রুলের পাগলামি কেমনতর? ওরা কি আবোল তাবোল বকে?
রামী। কে বলেছে পাগল হয়?
শ্যামী। ঐ যে তুমি বলিলে, “উন্মত্ত হইয়া ঝঙ্কার করিতেছে |”
রামী। কোন শালী আর তোদের কাছে বসন্ত বর্ণনা করিবে!
শ্যামী। ভাই, রাগ কর কেন? তুমি বেশী লেখা পড়া শিখেছ, আমি কম শিখেছি-আমায় বুঝাইয়া দিলেই ত হয়। সকলেই কি তোমার মত রসিকে?
রামী। (সাহঙ্কারে) আচ্ছা, তবে শোন্। ভ্রমরগণ মধুলোভে উন্মত্ত হইয়া ঝঙ্কার করিতেছে। তাহাদিগের গুণ্ গুণ্ রবে আমাদের প্রাণ বাহির হইতেছে।
শ্যামী। সই, ভোম্রার ডাক “গুণ্ গুণ্” না “ভোঁ ভোঁ”?
রামী। কবিরা বলেন, “গুণ্ গুণ্”।
শ্যামী। তবে গুণ্ গুণ্ই বটে। তা উহাতে আমাদের প্রাণ বাহির হয় কেন? ভিম্রুল কামড়াইলে প্রাণ বাহির হয় জানি, কিন্তু ভিম্রুল ডাকিলেও কি মরিতে হইবে?
রামী। এ পর্য্যন্ত সকল বিরহিণীগণ গুণ্ গুণ্ রবে মরিয়া আসিতেছে, তুই কী পীর যে মর্বি না?
বামী। আচ্ছা ভাই, শাস্ত্রে যদি লেখে ত না হয় মরিব। কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, কেবল কি ভিম্রুলের ডাকে মরিতে হইবে, না বোলতা মৌমাছি গুব্রে পোকার ডাক শুনিলেও অন্তর্জলে শুইব?
রামী। কবিরা শুধু ভ্রমরের রবেই মরিতে বলেন।
বামী। কবিদের বড় অবিচার। কেন, গুব্রে পোকা কি অপরাধ করেছে?
রা। তোর মর্তে হয় মরিস্, এখন শোন্।
বামী। বল।
রামী। কোকিলগণ বৃক্ষে বসিয়া পঞ্চম স্বরে গান করিতেছে।
শ্যামী। পঞ্চম স্বর কি ভাই?
রা। কোকিলের স্বরের মত।
শ্যামী। আর কোকিলের স্বর কেমন?
রামী। পঞ্চম স্বরের মত।
শ্যামী। বুঝিয়াছি। তার পর বল।
রামী। কোকিলগণ বৃক্ষে বসিয়া পঞ্চম স্বরে গান করিতেছে; তাহাতে বিরহিণীর অঙ্গ জ্বর জ্বর হইতেছে।
বামী। আর কুঁক্ড়োর পঞ্চম স্বরে অঙ্গ কেমন করে?
রামী। মরণ আর কি, কুঁক্ড়োর আবার পঞ্চম স্বর কি লো?
বামী। আমার তাতেই অঙ্গ জ্বর জ্বর হয়। কুঁক্ড়া ডাকিলেই মনে হয় যে, তিনি বাড়ী এলেই আমায় ঐ সর্ব্বনেশে পাখী রাঁধিয়া দিতে হবে।
রামী। তার পর মলয় সমীরণ। মৃদু মৃদু মলয় সমীরণে বিরহিণী শিহরিয়া উঠিতেছে।
শ্যামী। শীতে?
রামী। না-বিরহে। মলয় সমীরণ অন্যের পক্ষে শীতল, কিন্তু আমাদের পক্ষে অগ্নিতুল্য।
বামী। সই, তা সকলের পক্ষেই। এই চৈত্র মাসের দুপুরে রৌদ্রের বাতাস আগুনের হল্কা বলিয়া কাহার বোধ হয় না?
রামী। ও লো, আমি সে বাতাসের কথা বলিতেছি না।
শ্যামী। বোধ হয়, তুমি উত্তুরে বাতাসের কথা বলিতেছ। উত্তুরে বাতাস যেমন ঠাণ্ডা, মলয় বাতাস তেমন নয়।