লোকরহস্য
বসন্ত এবং বিরহ
রামী। সখি, ঋতুরাজ বসন্ত আসিয়া ধরাতলে উদয় হইয়াছেন। আইস, আমরা বসন্ত বর্ণনা করি। বিশেষ আমরা উভয়েই বিরহিণী; পূর্ব্বগামিনী বিরহিণীগণ চিরকাল বসন্তবর্ণনা করিয়া আসিয়াছেন, আইস আমরাও তাই করি।
বামী। সই, ভাল বলিয়াছ। আমরা বালিকা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শিখিয়া কেবল কুটনো কুটিয়া মরিলাম, আইস অদ্য কাব্যালোচনা করি।
রামী। সই! তবে আরম্ভ করি। সখি! ঋতুরাজ বসন্তের সমাগম হইয়াছে। দেখ, পৃথিবী কেমন অনির্ব্বচনীয় ভাব ধারণ করিয়াছেন। দেখ, চূতলতা কেমন নব মুকুলিত-
বামী। বৃক্ষে বৃক্ষে শজিনা খাড়া বিলম্বিত-
রামী। মলয় মারুত মৃদু মৃদু প্রধাবিত-
বামী। তদ্বাহিত ধূলায় দন্ত কিচ্কিচিত।
রামী। দূর ছুঁড়ী-ও কি! শোন্। ভ্রমরগণ পুষ্পের উপর গুণ্ গুণ্ করিতেছে-
বামী। মাছিগণ ভাতের উপর ভন্ ভন্ করিতেছে-
রামী। বৃক্ষোপরে কোকিলগণ পঞ্চমস্বরে কুহু কুহু করিতেছে-
বামী। গাজনতলায় ঢাকিগণ অষ্টমস্বরে চড় চড় করিতেছে।
রামী। না ভাই, তোকে নিয়ে বসন্ত বর্ণন হয় না। আমি শ্যামীকে ডাকি। আয় সই শ্যামী, আমরা বসন্ত বর্ণনা করি।
(শ্যামী আসিল)
শ্যামী। আমি ত সখি তোমাদের মত ভাল লেখা পড়া জানি না; একটু একটু জানি মাত্র, আমি সকল বুঝিতে পারিব না-আমাকে মধ্যে মধ্যে বুঝাইয়া দিতে হবে।
রামী। আচ্ছা! দেখ সখি, বসন্ত কি অপূর্ব্ব সময়! কেমন চূতলতা সকল নব মুকুলিত-
শ্যামী। সই, আঁবের গাছই দেখিয়াছি, আঁবের লতা কোন্গুলা?
রামী। আঁবের লতা আছে শুনিয়াছি, কিন্তু কখন চক্ষে দেখি নাই। দেখি না দেখি, চূতলতা ভিন্ন চূতবৃক্ষ কখন পড়ি নাই। তবে চূতলতাই বলিতে হইবে, চূতবৃক্ষ বলা হইবে না।
শ্যামী। তবে বল।
রামী। চূতলতিকা নব মুকুলিত হইয়া-
শ্যামী। সই! এই বলিলে চূতলতা-আবার লতিকা হইল কেন?
রামী। আরও কিছু মিষ্ট হইল। চূতলতিকা নব মুকুলিত হইয়া চারিদিকে সৌগন্ধ বিকীর্ণ করিতেছে-
বামী। ভাই, আঁবের বোলে যে বসন্তকালে চুঁইয়ে গিয়া কড়েয়া ধরে।
শ্যামী। বলিলে কি হয়, কেমন মিষ্ট হইল দেখ দেখি।
রামী। তাহাতে ভ্রমরগণ মধুলোভে উন্মত্ত হইয়া ঝঙ্কার করিতেছে, শুনিয়া আমাদিগের প্রাণ বাহির হইতেছে।
শ্যামী। আহা! সখি, সত্যই বলিয়াছ। সই, ভ্রমর কাকে বলে?
রামী। মর্ নেকি, তাও জানিস্নে। ভ্রমর বলে ভোম্রাকে।
শ্যামী। ভোম্রা কোন্গুলো ভাই?
রামী। ভোম্রা বলে ভিম্রুলকে।