দেবী চৌধুরাণী
রঙ্গরাজ উত্তর করিল, “যাইতেছি। কিন্তু আপনাকেও আমাদের সঙ্গে যাইতে হইবে।”
ব্র। সে কি? আমি কোথায় যাইব?
র। আমাদের রাণীর আছে।
ব্র। তোমাদের আবার রাণী কে?
র। আমাদের রাজরাণী।
ব্র। তিনি আবার কে? ডাকাইতের রাজরাণী ত কখন শুনি নাই।
র। দেবী রাণীর নাম কখনও শুনেন নাই?
ব্র। ও হো! তোমরা দেবী চৌধুরাণীর দল?
র। দলাদলি আবার কি? আমরা রাণীজির কার্পলর্দাজ।
ব্র। যেমন রাণী, তেমন কার্পকর্দাজ! তা, আমাকে রাণী দর্শনে যাইতে হইবে কেন? আমাকে কয়েদ রাখিয়া কিছু আদায় করিবে, এই অভিপ্রায়?
র। কাজেই বজরায় ত কিছু পাইলাম না। আপনাকে আটক করিলে যদি কিছু পাওয়া যায়।
ব্র। আমারও যাইবার ইচ্ছা হইতেছে–তোমাদের রাজরাণী একটা দেখবার জিনিস শুনিয়াছি। তিনি না কি যুবতী?
র। তিনি আমাদের মা–সন্তানে মার বয়সের হিসাব রাখে না।
ব্র। শুনিয়াছি বড় রূপবতী।
র। আমাদের মা ভগবতীর তুল্য।
ব্র। চল, তবে ভগবতী-দর্শনে যাই।
এই বলিয়া, ব্রজেশ্বর রঙ্গরাজের সঙ্গে কামরার বাহিরে আসিলেন। দেখিলেন যে, বজরার মাঝিমাল্লা সকলে ভয়ে জলে পড়িয়া কাছি ধরিয়া ভাসিয়া আছে। ব্রজেশ্বর তাহাদিগকে বলিলেন, “এখন তোমরা বজরায় উঠিতে পার–ভয় নাই। উঠিয়া আল্লার নাম নাও। তোমাদের জান ও মান ও দৌলত ও ইজ্জৎ সব বজায় আছে! তোমরা বড় হুঁশিয়ার!”
মাঝিরা তখন একে একে বজরায় উঠিতে লাগিল। ব্রজেশ্বর রঙ্গরাজকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন আমার দ্বারবান্ দের বাঁধন খুলিয়া দিতে পারি কি?”
রঙ্গরাজ বলিল, “আপত্তি নাই। উহারা যদি হাত খোলা পাইয়া আমাদের উপর আক্রমণ করে, তখনই আমরা আপনার মাথা কাটিয়া ফেলিব। ইহা উহাদের বুঝাইয়া দিন।”
ব্রজেশ্বর দ্বারবান্ দিগকে সেইরূপ বুঝাইয়া দিলেন। আর ভরসা দিলেন যে, তাহারা যেরূপ বীরত্ব প্রকাশ করিয়াছে, তাহাতে শীঘ্রই তাহাদের ডালরুটির বরাদ্দ বাড়িবে। তখন ব্রজেশ্বর ভৃত্যবর্গকে আদেশ করিলেন যে, “তোমরা নিঃশঙ্কচিত্তে এইখানে বজরা লইয়া থাক। কোথাও যাইও না বা কিছু করিও না। আমি শীঘ্র ফিরিয়া আসিতেছি।” এই বলিয়া তিনি রঙ্গরাজের সঙ্গে ছিপে উঠিলেন। ছিপের নাবিকেরা “দেবী রাণী-কি জয়” হাঁকিল–ছিপ বাহিয়া চলিল।