মৃণালিনী
ব্রা। কি করিয়াছে?-কিছু না-আমি-আমি তার দুর্দশা করিয়াছি, তাহার প্রতিশোধ হইল-
হে। কি দুর্দশা করিয়াছ?
ব্রা। আর কথা কহিতে পারি না, জল দাও।
হেমচন্দ্র পুনর্বার তাহাকে জলপান করাইলেন। ব্রাহ্মণ জলপান করিয়া স্থির হইলে হেমচন্দ্র তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার নাম কি?”
ব্রা। ব্যোমকেশ।
হেমচন্দ্রের চক্ষু হইতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হইল। দন্তে অধর দংশন করিলেন। করস্থ শূল দৃঢ়তর মুষ্টিবদ্ধ করিয়া ধরিলেন। আবার তখনই শান্ত হইয়া কহিলেন, “তোমার নিবাস কোথা?”
ব্রা। গৌড়-গৌড় জান না? মৃণালিনী আমাদের বাড়ীতে থাকিত।
হে। তার পর?
ব্রা। তার পর-তার পর আর কি? তার পর আমার এই দশা-মৃণালিনী পাপিষ্ঠা; বড় নির্দয়-আমার প্রতি ফিরিয়াও চাহিল না। রাগ করিয়া আমার পিতার নিকট আমি তাহার নামে মিছা কলঙ্ক রটাইলাম। পিতা তাহাকে বিনাদোষে তাড়াইয়া দিলেন। রাক্ষসী-রাক্ষসী আমাদের ছেড়ে গেল।
হে। তবে তুমি তাহাকে গালি দিতেছ কেন?
ব্রা। কেন?-কেন? গালি-গালি দিই? মৃণালিনী আমাকে ফিরিয়া দেখিত না-আমি-আমি তাহাকে দেখিয়া জীবন-জীবন ধারণ করিতাম। সে চলিয়া আসিল, সেই-সেই অবধি আমার সর্বস্ব ত্যাগ, তাহার জন্য কোন্ দেশে-কোন্ দেশে না গিয়াছি-কোথায় পিশাচীর সন্ধান না করিয়াছি? গিরিজায়া-ভিখারীর মেয়ে-তার আয়ি বলিয়া দিল-নবদ্বীপে আসিয়াছে-নবদ্বীপে আসিলাম, সন্ধান নাই। যবন-যবন-হস্তে মরিলাম, রাক্ষসীর জন্য মরিলাম-দেখা হইলে বলিও-আমার পাপের ফল ফলিল।
আর ব্যোমকেশের কথা সরিল না। সে পরিশ্রমে একেবারে নির্জীব হইয়া পড়িল। নির্বাণোন্মুখ দীপ নিবিল! ক্ষণপরে বিকট মুখভঙ্গী করিয়া ব্যোমকেশ প্রাণত্যাগ করিল।
হেমচন্দ্র আর দাঁড়াইলেন না। আর যবন বধ করিলেন না-কোন মতে পথ করিয়া গৃহাভিমুখে চলিলেন।