মৃণালিনী
তখন মাধবাচার্য গাত্রোত্থান করিয়া হেমচন্দ্রের হস্ত ধারণ করিলেন; অতি কোমল, স্নেহময় স্বরে কহিলেন, “বৎস! তাত! মুখ তোল, আমার সঙ্গে কথা কও!”
হেমচন্দ্র মুখ তুলিলেন। মুখ দেখিয়া মাধবাচার্যও ভীত হইলেন। মাধবাচার্য কহিলেন, “আমার সহিত আলাপ কর। ক্রোধ হইয়া থাকে, তাহা ব্যক্ত কর |”
হেমচন্দ্র কহিলেন, “কাহার কথায় বিশ্বাস করিব? হৃষীকেশ একরূপ কহিয়াছে। ভিখারিণী আর এক প্রকার বলিল |”
মাধবাচার্য কহিলেন, “ভিখারিণী কে? সে কি বলিয়াছে?”
হেমচন্দ্র অতি সংক্ষেপে উত্তর দিলেন।
মাধবাচার্য সঙ্কুচিত স্বরে কহিলেন, “হৃষীকেশেরই কথা মিথ্যা বোধ হয় |”
হেমচন্দ্র কহিলেন, “হৃষীকেশের প্রত্যক্ষ |”
তিনি উঠিয়া দাঁড়াইলেন। পিতৃদত্ত শূল হস্তে লইলেন। কম্পিত কলেবরে গৃহমধ্যে নি:শব্দে পাদচারণ করিতে লাগিলেন।
আচার্য জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি ভাবিতেছ?”
হেমচন্দ্র করস্থ শূল দেখাইয়া কহিলেন, “মৃণালিনীকে এই শূলে বিদ্ধ করিব |”
মাধবাচার্য তাঁহার মুখকান্তি দেখিয়া ভীত হইয়া অপসৃত হইলেন।
প্রাতে মৃণালিনী বলিয়া গিয়াছিলেন, “হেমচন্দ্র আমারই |”