চতুর্থ পরিচ্ছেদ : উপনয়-বহ্নিব্যাপ্যো ধূমবান্

গিরিজায়া গীত গায়িল,

        “কাহে সই জীয়ত মরত কি বিধান?

ব্রজকি কিশোর সই,                কাঁহা গেল ভাগই,

               ব্রজজন টুটায়ল পরাণ |”

সঙ্গীতধ্বনি হেমচন্দ্রের কর্ণে প্রবেশ করিল। স্বপ্নশ্রুত শব্দের ন্যায় কর্ণে প্রবেশ করিল।

গিরিজায়া আবার গায়িল,

“ব্রজকি কিশোর সই,                কাঁহা গেল ভাগই,

               ব্রজবধূ টুটায়ল পরাণ |”

হেমচন্দ্র উন্মুখ হইয়া শুনিতে লাগিলেন।

গিরিজায়া আবার গায়িল,

“মিলি সেই নাগরী,                 ভুলি সেই মাধব,

               রূপবিহীন গোপকুঙারী।

কো জানে পিয় সই,                রসময় প্রেমিক,

               হেন বঁধূ রূপকি ভিখারী ||”

হেমচন্দ্র কহিলেন, “এ কি! মনোরমা, এ যে গিরিজায়ার স্বর! আমি চলিলাম |” এই বলিয়া লম্ফ দিয়া হেমচন্দ্র শয্যা হইতে অবতরণ করিলেন। গিরিজায়া গায়িতে লাগিল,

“আগে নাহি বুঝনু,                রূপ দেখি ভুলনু,

               হৃদি বৈনু চরণ যুগল।

যমুনা-সলিলে সই,                তব তনু ডারব,

               আন সখি ভখিব গরল ||”

হেমচন্দ্র গিরিজায়ার সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। ব্যস্ত স্বরে কহিলেন, “গিরিজায়া। এ কি গিরিজায়া! তুমি এখানে? তুমি এখানে কেন? তুমি এ দেশে কবে আসিলে?”

গিরিজায়া কহিল, “আমি এখানে অনেক দিন আসিয়াছি |” এই বলিয়া আবার গায়িতে লাগিল,

“কিবা কাননবল্লরী,                 গল বেঢ়ি বাঁধই,

               নবীন তমালে দিব ফাঁস |”

হেমচন্দ্র কহিলেন, “তুমি এ দেশে কেন এলে?”

গিরিজায়া কহিল, “ভিক্ষা আমার উপজীবিকা। রাজধানীতে অধিক ভিক্ষা পাইব বলিয়া আসিয়াছি-

কিবা কাননবল্লরী,                গল বেঢ়ি বাঁধই,

               নবীন তমালে দিব ফাঁস |”

হেমচন্দ্র গীতে কর্ণপাত না করিয়া কহিলেন, “মৃণালিনী কেমন আছে; দেখিয়া আসিয়াছ?

গিরিজায়া গায়িতে লাগিল,

“নহে-শ্যাম শ্যাম শ্যাম, শ্যাম নাম জপয়ি,

               ছার তনু করব বিনাশ |”