পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ

চুরি বন্ধ হইল, কিন্তু টাকার তবু কুলান হয় না। রাজ্যের অবস্থা রাজাকে বলা নিতান্ত আবশ্যক, কিন্তু রাজাকে পাওয়া ভার, পাইলেও কথা হয় না। চন্দ্রচূড় সন্ধানে সন্ধানে ফিরিয়া আবার একদিন রাজাকে ধরিলেন-বলিলেন, “মহারাজ! একবার কথায় কর্ণপাত না করিলে রাজ্য থাকে না!”

রাজা। থাকে, থাকে, যায় যায়। ভাল শুনিতেছি, বলুন কি হয়েছে?

চ। সিপাহী সব দলে দলে ছাড়িয়া চলিতেছে।

রাজা। কেন?

চ। বেতন পায় না।

রাজা। কেন পায় না?

চ। টাকা নাই।

রাজা। এখনও কি চুরি চলিতেছে না কি?

চ। না, চুরি বন্ধ হইয়াছে। কিন্তু তাতে কি হইবে? যে টাকা চোরের পেটে গিয়েছে, তা ত আর ফেরে নাই।

রাজা। কেন, আদায় তহসিল হইতেছে না?

চ। এক পয়সাও না।

রাজা। কারণ কি?

চ। যাহাদের প্রতি আদায়ের ভার, তাহারা কেহ বলে, “আদায় করিয়া শেষ তহবিল গরমিল হইলে শূলে যাব না কি?”

রাজা। তাহাদের বর্তদরফ করুন।

চ। নূতন লোক পাইব কোথায়? আর কেবল নূতন লোকের দ্বারায় কি আদায় তহসিলের কাজ হয়?

রাজা। তবে তাহাদিগকে কয়েদ করুন।

চ। সর্বনাশ! তবে আদায় তহসিল করিবে কে?

রাজা। পনের দিনের মধ্যে যে বাকি বকেয়া না করিবে, তাহাকে কয়েদ করিব।

চ। সকল তহসিলদারেরও দোষ নাই। দেনেওয়ালারা অনেকে দিতেছে না।

রাজা। কেন দেয় না?

চ। বলে, “মুসলমানের রাজ্য হইলে দিব। এখন দিয়া কি দোকর দিব?”

রাজা। যে টাকা না দিবে, যাহার বাকি পড়িবে, তাহাকেও কয়েদ করিতে হইবে।

চন্দ্রচূড় হাঁ করিয়া রহিলেন। শেষ বলিলেন, “মহারাজ, কারাগারে এত স্থান কোথা?”

রাজা। বড় বড় চালা তুলিয়া দিবেন।

এই বলিয়া বাকিদার ও তহসিলদার, উভয়ের কয়েদের হুকুমে স্বাক্ষর করিয়া রাজা চিত্তবিশ্রামে প্রস্থান করিলেন। চন্দ্রচূড় মনে মনে শপথ করিলেন, আর কখনও রাজাকে রাজকার্যের কোন কথা জানাইবেন না।

এই হুকুমে দেশে ভারি হাহাকার পড়িয়া গেল। কারাগার সকল ভরিয়া গেল-চন্দ্রচূড় চালা তুলিয়া কুলাইতে পারিলেন না। বাকিদার, তহসিলদার, উভয়েই দেশ ছাড়িয়া পলাইতে লাগিল।