র। যদি আমার বাপের বাড়ী রাখিয়া আসিতে পার, তবে যাইতে পারি। তা বড় রাণীই বা যাইতে দিবেন কেন? ঠাকুর মহাশয় বা যাইতে দিবেন কেন?

গ। তবে লুকাইয়া লইয়া যাইতে হইবে। এক্ষণে তাহার কোন প্রয়োজন নাই। যদি তেমন বিপদ দেখি, আমি আসিয়া আপনাদিগকে লইয়া গিয়া রাখিয়া আসিব।

র। আমি কি প্রকারে সংবাদ পাইব?

গ। মুরলার দ্বারা সংবাদ লইবেন। কিন্তু মুরলা যেন অতি গোপনে আমার নিকট যায়।

র নিশ্বাস ছাড়িয়া, কাঁপিয়া বলিল, “তুমি আমার প্রাণ দান করিলে, আমি চিরকাল তোমার দাসী হইয়া থাকিব। দেবতারা তোমার মঙ্গল করুন |”

এই বলিয়া রমা গঙ্গারামকে বিদায় দিল। মুরলা গঙ্গারামকে বাহিরে রাখিয়া আসিল।

কাহারও মনে কিছু ময়লা নাই। তথাপি একটা গুরুতর দোষের কাজ হইয়া গেল। রমা ও গঙ্গারাম উভয়ে তাহা মনে বুঝিল। গঙ্গারাম ভাবিল, “আমার দোষ কি?” রমা বলিল, “এ না করিয়া কি করি-প্রাণ যায় যে |” কেবল মুরলা সন্তুষ্ট।

গঙ্গারামের যদি তেমন চক্ষু থাকিত, তবে গঙ্গারাম ইহার ভিতর আর একজন লুকাইয়া আছে দেখিতে পাইতেন। সে মনুষ্য নহে-দেখিতেন-

*দক্ষিণাপাঙ্গনিবিষ্টমুষ্টিং নতাংসমাকুঞ্চিতসব্যপাদম্ |

* * * চক্রীকৃতচারুচাপং প্রহর্তুমভ্যুদ্যতমাত্মযোনিম্ ||

এ দিকে বাদীর মনেও যা, বিধির মনেও তা। চন্দ্রচূড় ঠাকুর তোরাব খাঁর কাছে এই বলিয়া গুপ্তচর পাঠাইলেন যে, “আমরা এ রাজ্য মায় কেল্লা সেলেখানা আপনাদিগকে বিক্রয় করিব-কত টাকা দিবেন? যুদ্ধে কাজ কি-টাকা দিয়া নিন না?”

চন্দ্রচূড় মৃণ্ময়কে ও গঙ্গারামকে এ কথা জানাইলেন। মৃণ্ময় ক্রুদ্ধ হইয়া চোখ ঘুরাইয়া বলিল, “কি! এত বড় কথা?”

চন্দ্রচূড় বলিলেন, “দূর মূর্খ! কিছু বুদ্ধি নাই কি? দরদস্তুর করিতে করিতে এখন দুই মাস কাটাইতে পারিব। তত দিনে রাজা আসিয়া পড়িবেন |”

গঙ্গারামের মনে কি হইল বলিতে পারি না। সে কিছুই বলিল না।