সীতারাম
মু। তাতে দোষ কি?
গ। সিং-দরজা দিয়া গেলে দোষ ছিল না। এ যে খিড়কি। অন্তঃপুরে যাইতে হইবে না কি?
মু। সাহস হয় না?
গ। না-আমার যে সাহস হয় না, এ আমার প্রভুর অন্তঃপুর! বিনা হুকুমে যাইতে পারি না।
মু। কার হুকুম চাই?
গ। রাজার হুকুম।
মু। তিনি ত দেশে নাই। রাণীর হুকুম হইলে চলিবে?
গঙ্গা। চলিবে।
মুরলা। আসুন, আমি রাণীর হুকুম আপনাকে শুনাইব।
গঙ্গা। কিন্তু পাহারাওয়ালা তোমাকে যাইতে দিবে?
মুরলা। দিবে।
গঙ্গা। কিন্তু আমাকে না চিনিলে ছাড়িয়া দিবে না। এ অবস্থায় পরিচয় দিবার আমার ইচ্ছা নাই।
মুরলা। পরিচয় দিবারও প্রয়োজন নাই। আমি আপনাকে লইয়া যাইতেছি।
দ্বারে প্রহরী দণ্ডায়মান। মুরলা তাহার নিকটে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কেমন পাঁড়ে ঠাকুর, দ্বার খোলা রাখিয়াছ ত?”
পাঁড়ে ঠাকুর বলিলেন, “হাঁ রাখিয়েসে। এ কোন্?”
প্রহরী গঙ্গারামের প্রতি দৃষ্টি করিয়া এই কথা বলিল। মুরলা বলিল, “এ আমার ভাই |”
পাঁড়ে। মরদ যাতে পার্রবে না। হুকুম নেহি।
মুরলা তর্জন গর্জন করিয়া বলিল, “ই:, কার হুকুম রে? তোর আবার কার হুকুম চাই? আমার হুকুম ছাড়া কার হুকুম খুঁজিস? খ্যাংরা মেরে দাড়ি মুড়িয়ে দেব জানিস না?”
প্রহরী জড়সড় হইল, আর কিছু বলিল না। মুরলা গঙ্গারামকে লইয়া নির্বিঘ্নে অন্তঃপুরমধ্যে প্রবেশ করিল। এবং অন্তঃপুরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া দোতালায় উঠিল। সে একটি কুঠারি দেখাইয়া দিয়া বলিল, “ইহার ভিতর প্রবেশ করুন। আমি নিকটেই রহিলাম, কিন্তু ভিতরে যাইব না |”
গঙ্গারাম কৌতূহলাবিষ্ট হইয়া কুঠারির ভিতর প্রবেশ করিলেন। মহামূল্য দ্রব্যাদিতে সুসজিত গৃহ, রজতপালঙ্কে বসিয়া একটি স্ত্রীলোক- উজ্জ্বল দীপাবলীর স্নিগ্ধ রশ্মি তাহার মুখের উপর পড়িয়াছে, সে অধোবদনে চিন্তা করিতেছে। আর কেহ নাই। গঙ্গারাম মনে করিলেন, এমন সুন্দরী পৃথিবীতে আর জন্মে নাই। সে রমা।