কৃষ্ণকান্তের উইল
এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে রাত্রি প্রহরাতীত হইল। তখন নিশাকর দেখিলেন, নিঃশব্দ পাদবিক্ষেপে রোহিণী আসিয়া কাছে দাঁড়াইল। নিশ্চয়কে সুনিশ্চিত করিবার জন্য নিশাকর জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে গা?”
রোহিণীও নিশ্চয়কে সুনিশ্চিত করিবার জন্য বলিল, “তুমি কে?”
নিশাকর বলিল, “আমি রাসবিহারী |”
রোহিণী বলিল, “আমি রোহিণী |”
নি। এত রাত্রি হলো কেন?
রো। একটু না দেখে শুনে ত আসতে পারি নে। কি জানি কে কোথা দিয়ে দেখতে পাবে। তা তোমার বড় কষ্ট হয়েছে।
নি। কষ্ট হোক না হোক, মনে মনে ভয় হইতেছিল যে, তুমি বুঝি ভুলিয়া গেলে।
রো। আমি যদি ভুলিবার লোক হইতাম, তা হলে, আমার দশা এমন হইবে কেন? এক জনকে ভুলিতে না পারিয়া এদেশে আসিয়াছি; আর আজ তোমাকে না ভুলিতে পারিয়া এখানে আসিয়াছি।
এই কথা বলিতেছিল, এমত সময়ে কে আসিয়া পিছন হইতে রোহিণীর গলা টিপিয়া ধরিল। রোহিণী চমকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কে রে?”
গম্ভীর স্বরে কে উত্তর করিল, “তোমার যম |”
রোহিণী চিনিল যে গোবিন্দলাল। তখন আসন্ন বিপদ বুঝিয়া চারি দিক অন্ধকার দেখিয়া রোহিণী ভীতবিকম্পিতস্বরে বলিল, “ছাড়! ছাড়! আমি মন্দ অভিপ্রায়ে আসি নাই। আমি যে জন্য আসিয়াছি, এই বাবুকে না হয় জিজ্ঞাসা কর |”
এই বলিয়া রোহিণী যেখানে নিশাকর বসিয়াছিল, সেই স্থান অঙ্গুলিনির্দ্দেশ করিয়া দেখাইল। দেখিল, কেহ সেখানে নাই। নিশাকর গোবিন্দলালকে দেখিয়া পলকের মধ্যে কোথায় সরিয়া গিয়াছে। রোহিণী বিস্মিতা হইয়া বলিল, “কৈ, কেহ কোথাও নাই যে!”
গোবিন্দলাল বলিল, “এখানে কেহ কোথাও নাই। আমার সঙ্গে ঘরে এস |”
রোহিণী বিষণ্ণচিত্তে ধীরে ধীরে গোবিন্দলালের সঙ্গে ঘরে ফিরিয়া গেল।