এই বলিয়া ব্রজেশ্বর আপনার অঙ্গুলি হইতে বহুমূল্য হীরকাঙ্গুরীয় উন্মোচন করিয়া প্রফুল্লকে দিল। প্রফুল্ল আপনার আঙুলে আঙ্গটিটি পরাইতে পরাইতে বলিল, “যদি তুমি আমাকে ভুলিয়া যাও?”

ব্র। সকলকে ভুলিব–তোমায় কখনও ভুলিব না।

প্র। যদি এর পর চিনিতে না পার?

ব্র। ও মুখ কখনও ভুলিব না।

প্র। আমি এ আঙ্গটিটি বেচিব না। না খাইয়া মরিয়া যাইব, তবু কখন বেচিব না। যখন তুমি আমাকে না চিনিতে পারিবে, তখন তোমাকে এই আঙ্গটি দেখাইব। ইহাতে কি লেখা আছে?

ব্র। আমার নাম খোদা আছে।

দুই জনে অশ্রুজলে নিষিক্ত হইয়া পরস্পরের নিকট বিদায় গ্রহণ করিল।

প্রফুল্ল নীচে আসিলে সাগর ও নয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল। পোড়ারমুখী নয়ান বলিল, “দিদি, কাল রাত্রে কোথায় শুইয়াছিলি?”

প্র। ভাই, কেহ তীর্থ করিলে সে কথা আপনার মুখে বলে না।

ন। সে আবার কি?

সাগর। বুঝতে পারিস নে? কাল উনি আমাকে তাড়াইয়া আমার পালঙ্কে, বিষ্ণুর লক্ষ্মী হইয়াছিলেন। মিন্সে আবার সোহাগ করে আঙ্গটি দিয়েছে।

সাগর নয়ানকে প্রফুল্লের হাতে ব্রজেশ্বরের আঙ্গটি দেখাইল। দেখিয়া নয়ানতারা হাড়ে হাড়ে জ্বলিয়া গেল। বলিল, “দিদি, ঠাকুর তোমার কথার কি উত্তর দিয়াছেন, শুনেছ?”

প্রফুল্লের সে কথা আর মনে ছিল না, সে ব্রজেশ্বরের আদর পাইয়াছিল। প্রফুল্ল জিজ্ঞাসা করিল, “কি কথার উত্তর?”

ন। তুমি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলে, কি করিয়া খাইবে?

প্র। তার আর উত্তর কি?

ন। ঠাকুর বলিয়াছেন, চুরি-ডাকাতি করিয়া খাইতে বলিও।

“দেখা যাবে” বলিয়া প্রফুল্ল বিদায় হইল।

প্রফুল্ল আর কাহারও সঙ্গে কথা কহিল না। একেবারে বাহিরে খিড়কিদ্বার পার হইল। সাগর পিছু পিছু গেল। প্রফুল্ল তাহাকে বলিল, “আমি, ভাই, আজ চলিলাম। এ বাড়ীতে আর আসিব না। তুমি বাপের বাড়ী গেলে, সেখানে তোমার সঙ্গে দেখা হইবে।”

সা। তুমি আমার বাপের বাড়ী চেন?

প্র। না চিনি, চিনিয়া যাইব।

সা। তুমি আমার বাপের বাড়ী যাবে?

প্র। আমার আর লজ্জা কি?

সা। তোমার মা তোমার সঙ্গে দেখা করিবেন বলিয়া দাঁড়াইয়া আছেন।

বাগানের দ্বারের কাছে যথার্থ প্রফুল্লের মা দাঁড়াইয়া ছিল। সাগর দেখাইয়া দিল। প্রফুল্ল মার কাছে গেল।