দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

ব্রহ্মানন্দ স্নানাহার করিয়া নিদ্রার উদ্যোগে ছিলেন, এমত সময়ে বিস্ময়াপন্ন হইয়া দেখিলেন যে, হরলাল রায়। হরলাল আসিয়া তাহার শিওরে বসিলেন।

ব্র। সে কি, বড় বাবু যে? কখন বাড়ী এলে?

হ। বাড়ী এখনও যাই নাই।

ব্র। একেবারে এইখানেই? কলিকাতা হইতে কতক্ষণ আসিতেছ?

হ। কলিকাতা হইতে দুই দিবস হইল আসিয়াছি। এই দুই দিন কোন স্থানে লুকাইয়া ছিলাম। আবার নাকি নূতন উইল হইবে?

ব্র। এই রকম ত শুনিতেছি।

হ। আমার ভাগে এবার শূন্য?

ব্র। কর্তা এখন রাগ করে তাই বল‍‍ছেন, কিন্তু সেটা থাকবে না।

হ। আজি বিকালে লেখাপড়া হবে? তুমি লিখিবে?

ব্র। তা কি করবো ভাই! কর্তা বলিলে ত “না” বলিতে পারি না।

হ। ভাল তাতে তোমার দোষ কি? এখন কিছু রোজগার করিবে?

ব্র। কিলটে চড়টা? তা ভাই, মার না কেন?

হ। তা নয়; হাজার টাকা।

ব্র। বিধবা বিয়ে কর্যে নাকি?

হর। তাই।

ব্র। বয়স গেছে।

হ। তবে আর একটি কাজ বলি। এখনই আরম্ভ কর। আগামী কিছু গ্রহণ কর।

এই বলিয়া ব্রহ্মানন্দের হাতে হরলাল পাঁচশত টাকার নোট দিলেন।

ব্রহ্মানন্দ নোট পাইয়া উলটিয়া পালটিয়া দেখিল। বলিল, “ইহা লইয়া আমি কি করিব?”

হ। পূঁজি করিও। দশ টাকা মতি গোয়ালিনীকে দিও।

ব্র। গোওয়ালা-ফোওয়ালার কোন এলাকা রাখি না। কিন্তু আমায় করিতে হইবে কি?

হ। দুইটি কলম কাট। দুইটি যেন ঠিক সমান হয়।

ব্র। আচ্ছা ভাই–যা বল, তাই শুনি।

এই বলিয়া ঘোষজ মহাশয়ের দুইটি নূতন কলম লিয়া ঠিক সমান করিয়া কাটিলেন। এবং লিখিয়া দেখিলেন যে, দুইটিরই লেখা একপ্রকার দেখিতে হয়।

তখন হরলাল বলিলেন, “ইহার একটি কলম বাক্সতে তুলিয়া রাখ। যখন উইল লিখিতে যাইবে, এই কলম লইয়া গিয়া ইহাতে উইল লিখিবে। দ্বিতীয় কলমটি লইয়া এখন একখানা লেখাপড়া করিতে হইবে। তোমার কাছে ভাল কালি আছে?”

ব্রহ্মানন্দ মসীপাত্র বাহির করিয়া লিখিয়া দেখাইলেন। হরলাল বলিতে লাগিল, “ভাল, এই কালি উইল লিখিতে যাইও |”

ব্র। তোমাদিগের বাড়ীতে কি দোওয়াত- কলম নাই যে, আমি ঘাড়ে করিয়া নিয়া যাব?