দুর্গেশনন্দিনী
রাজপুত্র প্রত্যাবর্তন করিলেন, কতলু খাঁ কহিলেন, “কাণ |”
রাজপুত্র বুঝিলেন। মুমূর্ষুর অধিকতর নিকটে দাঁড়াইয়া মুখের নিকট কর্ণাবনত করিলেন। কতলু খাঁ পূর্বাপেক্ষা অধিকতর অস্পষ্ট স্বরে বলিলেন, “বীর।__”
ক্ষণেক স্তব্ধ হইয়া রহিলেন, পরে বলিতে লাগিলেন, “বীরেন্দ্রসিংহ–তৃষা |”
আয়েষা পুনরপি অধরে পেয় সিঞ্চন করিলেন।
“বীরেন্দ্রসিংহের কন্যা |”
রাজপুত্রকে যেন বৃশ্চিক দংশন করিল; চমকিতের ন্যায় ঋজ্বায়ত হইয়া কিঞ্চিদ্দূরে দাঁড়াইলেন। কতলু খাঁ বলিতে লাগিলেন, “পিতৃহীনা–আমি পাপিষ্ঠ–উ: তৃষা |”
আয়েষা পুন: পুন: পানীয়াভিসিঞ্চন করিতে লাগিলেন। কিন্তু আর বাক্যস্ফুরণ দুর্ঘট হইল। শ্বাস ছাড়িতে ছাড়িতে বলিতে লাগিলেন, “দারুণ জ্বালা–সাধ্বী–তুমি দেখিও___”
রাজপুত্র কহিলেন, “কি?” কতলু খাঁর কর্ণে এই প্রশ্ন মেঘগর্জনবৎ বোধ হইল। কতলু খাঁ বলিতে লাগিলেন, “এই ক–কন্যার–মত পবিত্রা।–তুমি! -উ:! -বড় তৃষা–যাই যে---আয়েষা |”
আর কথা সরিল না; সাধ্যাতীত পরিশ্রম হইয়াছিল, শ্রমাতিরেক ফলে নির্জীব মস্তক ভূমিতে গড়াইয়া পড়িল। কন্যার নাম মুখে থাকিতে থাকিতে নবাব কতলু খাঁর প্রাণবিয়োগ হইল।