বিষবৃক্ষ
একচত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ : হীরার আয়ি
“হীরার আয়ি বুড়ী |
গোবরের ঝুড়ি |
হাঁটে গুড়ি গুড়ি |
দাঁতে ভাঙ্গে নুড়ি |
কাঁঠাল খায় দেড় বুড়ি |”
হীরার আয়ি লাঠি ধরিয়া গুড়ি গুড়ি যাইতেছিল, পশ্চাৎ পশ্চাৎ বালকের পাল, এই অপূর্ব কবিতাটি পাঠ করিতে করিতে করতালি দিতে দিতে এবং নাচিতে নাচিতে চলিয়াছিল।
এই কবিতাতে কোন বিশেষ নিন্দার কথা ছিল কি না, সন্দেহ–কিন্তু হীরার আয়ি বিলক্ষণ কোপাবিষ্ট হইয়াছিল। সে বালকদিগকে যমের বাড়ী যাইতে অনুজ্ঞা প্রদান করিতেছিল –এবং তাহাদিগের পিতৃপুরুষের আহারাদির বড় অন্যায় ব্যবস্থা করিতেছিল। এইরূপ প্রায় প্রত্যহই হইত।
নগেন্দ্রের দ্বারদেশে উপস্থিত হইয়া হীরার আয়ি বালকদিগের হস্ত হইতে নিষ্কৃতি পাইল। দ্বারবানদিগের ভ্রমরকৃষ্ণ শ্মশ্রুরাজি দেখিয়া তাহারা রণে ভঙ্গ দিয়া পলাইল। পলায়নকালে কোন বালক বলিল;-
“রামচরণ দোবে,
সন্ধ্যাবেলা শোবে,
চোর এলে কোথায় পালাবে?”
কেহ বলিল;-
“রাম দীন পাঁড়ে,
বেড়ায় লাঠি ঘাড়ে,
চোর দেখ্লে দৌড় মারে পুকুরের পাড়ে |”
কেহ বলিল;-
“লালচাঁদ সিং,
নাচে তিড়িং মিড়িং,
ডালরুটির যম, কিন্তু কাজে ঘোড়ার ডিম |”
বালকেরা দ্বারবানদিগের দ্বারা নানাবিধ অভিধান ছাড়া শব্দে অভিহিত হইয়া পলায়ন করিল।
হীরার আয়ি লাঠি ঠক্ ঠক্ করিয়া নগেন্দ্রের বাড়ীর ডাক্তারখানায় উপস্থিত হইল। ডাক্তারকে দেখিয়া চিনিয়া বুড়ী কহিল, “হাঁ বাবা–ডাক্তার বাবা কোথা গা?” ডাক্তার কহিলেন, “আমিই ত ডাক্তার |” বুড়ী কহিল, “আর বাবা, চোকে দেখতে পাই নে–বয়স হল পাঁচ সাত গণ্ডা, কি এক পোনই হয়–আমার দু:খের কথা বলিব কি–একটি বেটা ছিল, তা যমকে দিলাম–এখন একটি নাতিনী ছিল, তারও___” বলিয়া বুড়ী হাঁউ–মাউ–খাঁউ করিয়া উচ্চৈ:স্বরে কাঁদিতে লাগিল।
ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হইয়াছে তোর?”