বিষবৃক্ষ
যথাসময়ে নগেন্দ্র কাশীধামে আসিলেন। আসিয়া দেওয়ানকে সংবাদ দিলেন। তখন দেওয়ান অন্যান্য পত্রের সঙ্গে শিবপ্রসাদ ব্রহ্মচারীর পত্র পাঠাইলেন। নগেন্দ্র পত্র পাইয়া মর্ম্মাবগত হইয়া, অঙ্গুলিদ্বারা কপাল টিপিয়া ধরিয়া কাতরে কহিলেন, “জগদীশ্বর! মুহূর্তজন্যআমার চেতনা রাখ |” জগদীশ্বরের চরণে সে বাক্য পৌঁছিল; মুহূর্তজন্য নগেন্দ্রের চেতনা রহিল; কর্মাধক্ষ্যকে ডাকিয়া আদেশ করিলেন, “আজি রাত্রেই আমি রাণীগঞ্জ যাত্রা করিব–সর্বস্ব ব্যয় করিয়াও তুমি তাহার ব্যবস্থা কর |”
কর্মাধ্যক্ষ বন্দোবস্ত করিতে গেল। নগেন্দ্র তখন ভূতলে ধূলির উপর শয়ন করিয়া অচেতন হইলেন।
সেই রাত্রে নগেন্দ্র কাশী পশ্চাতে করিলেন। ভুবনসুন্দরী বারাণসি, কোন্ সুখী জন এমন শারদ রাত্রে তৃপ্তলোচনে তোমাকে পশ্চাৎ করিয়া আসিতে পারে? নিশা চন্দ্রহীনা; আকাশে সহস্র সহস্র নক্ষত্র জ্বলিতেছে!–গঙ্গাহৃদয় তরণীর উপর দাঁড়াইয়া যেদিকে চাও, সেই দিকে আকাশে নক্ষত্র!-অনন্ত তেজে অনন্তকাল হইতে জ্বলিতেছে–অবিরত জ্বলিতেছে, বিরাম নাই। ভূতলে দ্বিতীয় আকাশ!–নীলাম্বরবৎ স্থিরনীল তরঙ্গিণীহৃদয়; তীরে, সোপানে এবং অনন্ত পর্বতশ্রেণীবৎ অট্টালিকায়, সহস্র আলোক জ্বলিতেছে। প্রাসাদ পরে প্রাসাদ, তৎপরে প্রাসাদ; এইরূপ আলোকরাজি শোভিত অনন্ত প্রাসাদ শ্রেণী। আবার সমুদয় সেই স্বচ্ছ নদীনীরে প্রতিবিম্বিত–আকাশ, নগর, নদী,-সকলই জ্যোতির্বিন্দুময়। দেখিয়া নগেন্দ্র চক্ষু মুছিলেন। পৃথিবীর সৌন্দর্য তাঁহার আজি সহ্য হইল না। নগেন্দ্র বুঝিয়াছিলেন যে, শিবপ্রসাদের পত্র অনেক দিনের পর পৌঁছিয়াছে–এখন সূর্যমুখী কোথায়?