দুর্গেশনন্দিনী
“অ্যাঁ অ্যাঁ, তা তা তা তা” - বাঙ্নিষ্পত্তি হইয়া উঠিল না।
আশমানি কহিল, “তবে কি পারিবে না?”
“অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ, তা তা - স্বামিঠাকুরকে বলিয়া আসি |”
বিমলা কহিলেন, “স্বামিঠাকুরকে আবার বলবে কি? এ কি তোমার মাতৃশ্রাদ্ধ উপস্থিত যে স্বামিঠাকুরের কাছে ব্যবস্থা নিতে যাবে?”
দি। না, না, তা যাব না; তা কবে যেতে হবে?
বি। কবে? এখনই চল; দেখিতেছ না, আমি গহনাপত্র লইয়া বাহির হইয়াছি।
দি। এখনই?
বি। এখনই না ত কি? নহিলে বল, আমরা অন্য লোকের তল্লাস করি।
গজপতি আর থাকিতে পারিলেন না, বলিলেন, “চল, যাইতেছি |”
বিমলা বলিলেন, “দোছোট লও |”
দিগ্গজ নামাবলী গায়ে দিলেন। বিমলা অগ্রে, ব্রাহ্মণ পশ্চাতে যাত্রা করেন, এমন সময়ে দিগ্গজ বলিলেন, “সুন্দরি!”
বি। কি?
দি। আবার আসিবে কবে?
বি। আসিব কি আবার? একেবারে চলিলাম।
হাসিতে দিগ্গজের মুখ পরিপূর্ণ হিল, বলিলেন, “তৈজসপত্র রহিল যে |”
বি। ও সব তোমায় কিনে দিব।
ব্রাহ্মণ কিছু ক্ষুণ্ণ হইলেন; কি করেন, স্ত্রীলোকেরা মনে করিবে, আমাদের ভালবাসে না, অভাবপক্ষে বলিলেন, “খুঙ্গীপুতি?”
বিমলা বলিলেন, “শীঘ্র লও |”
বিদ্যাদিগ্গজের সবে দুখানি পুতি, - ব্যাকরণ আর একখানি স্মৃতি। ব্যাকরণখানি হস্তে লইয়া বলিলেন, “এখানিতে কাজই বা কি, এ ত আমার কণ্ঠে আছে।” এই বলিয়া কেবল স্মৃতিখানি খুঙ্গীর মধ্যে লইলেন। “দুর্গা শ্রীহরি” বলিয়া বিমলা ও আশমানির সহিত যাত্রা করিলেন।
আশমানি কহিল, “তোমরা আগু হও, আমি পশ্চাতে যাইতেছি |”
এই বলিয়া আশমানি গৃহে গেল, বিমলা ও গজপতি একত্র চলিলেন। অন্ধকারে উভয়ে অলক্ষ্য থাকিয়া দুর্গদ্বারের বাহির হইলেন। কিয়দ্দূর গমন করিয়া দিগ্গজ কহিলেন, “কই, আশমানি আসিল না?”
বিমলা কহিলেন, “সে বুঝি আসিতে পারিল না। আবার তাকে কেন?”
রসিকরাজ নীরব হইয়া রহিলেন। ক্ষণেক পরে নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন, “তৈজসপত্র |”