রাজসিংহ
তার পর ঔরঙ্গজেব আমদরবারে বসিয়া আপনার অভিপ্রায় প্রকাশ করিলেন। বলিলেন, “আমরা কাঠুরিয়ার ফাঁদে পড়িয়াই সন্ধিস্থাপন করিয়াছি। সে সন্ধি রক্ষণীয় নহে। ক্ষুদ্র একজন ভুঁইঞা রাজার সঙ্গে বাদশাহের আবার সন্ধি কি? আমি সন্ধিপত্র ছিঁড়িয়া ফেলিয়াছি। বিশেষ, সে রূপনগরের কুঙারীকে ফেরৎ পাঠায় নাই। রূপনগরীকে তাহার পিতা আমাকে দিয়াছে। অতএব রাজসিংহের তাহাতে অধিকার নাই। তাহাকে ফিরাইয়া না দিলে, আমি রাজসিংহকে ক্ষমা করিতে পারি না। অতএব যুদ্ধ যেমন চলিতেছিল, তেমনই চলিবে। রাণার রাজ্যমধ্যে গোরু দেখিলে, মুসলমান তাহা মারিয়া ফেলিবে। দেবালয় দেখিলেই তাহা ভগ্ন করিবে। জেজেয়া সর্বত্রই আদায় করিবে |”
এই সকল হুকুম জারি হইল। এদিকে দিলীর খাঁ দাইসুরীর পথ দিয়া মাড়বার হইতে উদয়পুরে প্রবেশের চেষ্টায় আসিতেছেন শুনিয়া রাজসিংহ, ঔরঙ্গজেবের কাছে লোক পাঠাইলেন এবং জিজ্ঞাসা করিলেন যে, সন্ধির পর আবার যুদ্ধ কেন? ঔরঙ্গজেব বলিলেন, “ভুঁইঞার সঙ্গে বাদশাহের সন্ধি? বাদশাহের রূপনগরী বেগম ফেরৎ না পাঠাইলে বাদশাহ তোমাকে ক্ষমা করিবেন না |” শুনিয়া, রাজসিংহ হাসিয়া বলিলেন, “আমি এখনও জীবিত আছি |” রূপনগরের রাজকুমারীর অপহরণটা ঔরঙ্গজেবের সম্ভাবনা নাই বিবেচনা করিয়া, রূপনগরের “রাও সাহেবকে” এক পরওয়ানা দিলেন, তাহাতে লিখিলেন, “তোমার কন্যা এখনও আমার নিকট উপস্থিত হয় নাই। শীঘ্র তাহাকে উপস্থিত করিবে–নহিলে রূপনগরের গড়ের চিহ্ন রাখিব না |” ঔরঙ্গজেবের ভরসা যে, পিতা জিদ করিলে চঞ্চলকুমারী তাঁহার নিকট আসিতে সম্মত হইতে পারে। পরওয়ানা পাইয়া বিক্রমসিংহ উত্তর লিখিল, “আমি শীঘ্র দুই হাজার অশ্বারোহী সেনা লইয়া আপনার হুজুরে হাজির হইব |”
ঔরঙ্গজেব ভাবিলেন, “সেনা কেন?” মনকে এইরূপ বুঝাইলেন যে, তাঁহার সাহায্যার্থ বিক্রমসিংহ সেনা লইয়া আসিতেছে।