চঞ্চলকুমারী–চক্ষের এক বিন্দু জল মুছিয়া ফেলিয়া বলিলেন, “বাপের এ অভিসম্পাত মাথায় করিয়া কোন্ কন্যা বিবাহ করিতে সাহস করিবে?”

রাণা। তবে যদি পিতৃগৃহে ফিরিয়া যাইবার অভিপ্রায় কর, তবে পাঠাইতে পারি।

চঞ্চল। কাজেই তাই। কিন্তু পিতৃগৃহে যাওয়াও যা, দিল্লী যাওয়াও তাই। তাহার অপেক্ষা বিষপান কিসে মন্দ?

রাণা। আমার এক পরামর্শ শুন। তুমিই আমার যোগ্যা মহিষী, আমি সহসা তোমাকে ত্যাগ করিতে পারিতেছি না। কিন্তু তোমার পিতার আশীর্‍বাদ ব্যতীতও তোমাকে বিবাহ করিব না। সে আশীর্‍বাদের ভরসা আমি একেবারে ত্যাগ করিতেছি না। মোগলের সঙ্গে যুদ্ধ নিশ্চিত। একলিঙ্গ আমার সহায়।4 আমি সে যুদ্ধে হয় মরিব, নয় মোগলকে পরাজিত করিব।

চ। আমার স্থির বিশ্বাস, মোগল আপনার নিকট পরাজিত হইবে।

রাণা। সে অতিশয় দু:সাধ্য কাজ। যদি সফল হই, তবে নিশ্চিত তোমার পিতার আশীর্‍বাদ পাইব।

চ। তত দিন?

রাণা। তত দিন তুমি আমার অন্ত:পুরে থাক। মহিষীদিগের ন্যায় তোমার পৃথক্ রেউলা5 মহিষীদিগের ন্যায় তোমারও দাসদাসী পরিচর্‍যার ব্যবস্থা করিব। আমি প্রচার করিব যে, অল্পদিনের মধ্যে তুমি আমার মহিষী হইবে। এবং সেই বিবেচনায় সকলেই তোমাকে মহিষীদিগের ন্যায় মহারাণী বলিয়া সম্বোধন করিবে। কেবল যত দিন না তোমার সঙ্গে আমার যথাশাস্ত্র বিবাহ হয়, তত দিন তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিব না। কি বল?

চঞ্চলকুমারী বিবেচনা করিয়া দেখিলেন, “ইহার অপেক্ষা সুব্যবস্থা এক্ষণে আর কিছু হইতে পারে না |” কাজেই সম্মত হইলেন। রাজসিংহও যেরূপ অঙ্গীকার করিয়াছিলেন, সেইরূপ বন্দোবস্ত করিলেন।



4- রাণাদিগের কুলদেবতা মহাদেব।
5- অবরোধ ।