যখন আমীর হোসেন সমরুর তাম্বুতে প্রবেশ করিলেন, তখন সমরু ও ফষ্টর একত্রে কথাবার্তা কহিতেছিলেন। আমীর হোসেন আসন গ্রহণ করিলে সমরু জন ষ্ট্যালকার্ট বলিয়া তাঁহার নিকট ফষ্টরের পরিচয় দিলেন। আমীর হোসেন ষ্ট্যালকার্টের সঙ্গে কথোপকথনে প্রবৃত্ত হইলেন।

আমীর হোসেন, অন্যান্য কথার পর ষ্ট্যালকার্টকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “লরেন্স ফষ্টর নামক একজন ইংরেজকে আপনি চিনেন?”

ফষ্টরের মুখ রক্তবর্ণ হইয়া গেল। সে মৃত্তিকাপানে দৃষ্টি করিয়া কিঞ্চিৎ বিকৃতকণ্ঠে কহিল, “লরেন্স ফষ্টর? কই—না ।”

আমীর হোসেন, পুনরপি জিজ্ঞাসা করিলেন, “কখন তাহার নাম শুনিয়াছেন?”

ফষ্টর কিছু বিলম্ব করিয়া উত্তর করিল, “নাম—লরেন্স ফষ্টর—হাঁ—কই? না ।”

আমীর হোসেন আর কিছু বলিলেন না, অন্যান্য কথা কহিতে লাগিলেন। কিন্তু দেখিলেন, ষ্ট্যালকার্ট আর ভাল করিয়া কথা কহিতেছে না। দুই এক বার উঠিয়া যাইবার উপক্রম করিল। আমীর হোসেন অনুরোধ করিয়া তাহাকে বসাইলেন। আমীর হোসেনের মনে মনে হইতেছিল যে, এ ফষ্টরের কথা জানে, কিন্তু বলিতেছে না।

ফষ্টর কিয়ৎক্ষণ পরে আপনার টুপি লইয়া মাথায় দিয়া বসিল। আমীর হোসেন জানিতেন যে, এটি ইংরেজদিগের নিয়মবহির্ভূত কাজ। আরও, যখন ফষ্টর টুপি মাথায় দিতে যায়, তখন তাহার শিরস্থ কেশশূন্য আঘাত—চিহ্নের উপর দৃষ্টি পড়িল। ষ্ট্যালকার্ট কি আঘাত—চিহ্ন ঢাকিবার জন্য টুপি মাথায় দিল!

আমীর হোসেন বিদায় হইলেন। আপন শিবিরে আসিয়া কুল্স মকচ ডাকিলেন; তাহাকে বলিলেন, “আমার সঙ্গে আয় ।” কুল্সআম তাঁহার সঙ্গে গেল।

কুল্সআমকে সঙ্গে লইয়া আমীর হোসেন পুনর্বার সমরুর তাম্বুতে উপস্থিত হইলেন। কুল্সনম বাহিরে রহিল। ফষ্টর তখনও সমরুর তাম্বুতে বসিয়াছিল। আমীর হোসেন সমরুকে বলিলেন, “যদি আপনার অনুমতি হয়, তবে আমার একজন বাঁদী আসিয়া আপনাকে সেলাম করে। বিশেষ কার্য আছে ।”

সমরু অনুমতি দিলেন। ফষ্টরের হৃৎকম্প হইল—সে গাত্রোত্থান করিল। আমীর হোসেন হাসিয়া হাত ধরিয়া তাহাকে বসাইলেন। কুল্সলমকে ডাকিলেন। কুল্স ম আসিল। ফষ্টরকে দেখিয়া নিস্পন্দ হইয়া দাঁড়াইল।

আমীর হোসেন কুলস মকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে এ?”

কুল্সহম্ বলিল, “লরেন্স ফষ্টর ।”

আমীর হোসেন ফষ্টরের হাত ধরিলেন। ফষ্টর বলিল, “আমি কি করিয়াছি?”

আমীর হোসেন তাহার কথার উত্তর না দিয়া সমরুকে বলিলেন, “সাহেব! ইহার গ্রেপ্তারীর জন্য নবাব নাজিমের অনুমতি আছে। আপনি আমার সঙ্গে সিপাহী দিন, ইহাকে লইয়া চলুক।”

সমরু বিস্মিত হইলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “বৃত্তান্ত কি?”

আমীর হোসেন বলিলেন, “পশ্চাৎ বলিব ।” সমরু সঙ্গে প্রহরী দিলেন, আমীর হোসেন ফষ্টরকে বাঁধিয়া লইয়া গেলেন।