চন্দ্রশেখর
আলি হিব্রাহিম খাঁ?”
হিব্রাহিম খাঁ উত্তর দিলেন। নবাব বলিলেন, “তোমার ন্যায় আমার বন্ধু জগতে নাই—তোমার কাছে আমার এই ভিক্ষা—তকি খাঁকে আমার কাছে লইয়া আইস ।”
হিব্রাহিম খাঁ অভিবাদন করিয়া, তাম্বুর বাহিরে গিয়া অশ্বারোহণ করিলেন। নবাব তখন বলিলেন, “আর কেহ আমার উপকার করিবে?”
সকলেই যোড়হাত করিয়া হুকুম চাহিল। নবাব বলিলেন, “কেহ সেই ফষ্টরকে আনিতে পার?”
আমীর হোসেন বলিলেন, “সে কোথায় আছে, আমি তাহার সন্ধান করিতে কলিকাতায়
চলিলাম ।”
নবাব ভাবিয়া বলিলেন, “আর সেই শৈবলিনী কে? তাহকে কেহ আনিতে পারিবে?”
মহম্মদ ইর্ফা ন যুক্তকরে নিবেদন করিল, “অবশ্য এতদিন সে দেশে আসিয়া থাকিবে, আমি তাহাকে লইয়া আসিতেছি ।” এই বলিয়া মহম্মদ ইর্ফােন বিদায় হইল।
তাহার পরে নবাব বলিলেন, “যে ব্রহ্মচারী মুঙ্গেরে বেগমকে আশ্রয় দান করিয়াছিলেন, তাঁহার কেহ সন্ধান করিতে পার?”
মহম্মদ ইর্ফা ন বলিল, “হুকুম করিলে শৈবলিনীর সন্ধানের পর ব্রহ্মচারীর উদ্দেশে মুঙ্গের যাইতে পারি ।”
শেষ কাসেম আলি বলিলেন, “গুর্গাণ খাঁ কত দূর?”
অমাত্যবর্গ বলিলেন, “তিনি ফৌজ লইয়া উদয়নালায় আসিতেছেন শুনিয়াছি—কিন্তু এখনও পৌঁছেন নাই ।” নবাব মৃদু মৃদু বলিতে লাগিলেন, “ফৌজ! ফৌজ! কাহার ফৌজ!”
একজন কে চুপি চুপি বলিলেন, “তাঁরি!”
অমাত্যবর্গ বিদায় হইলেন। তখন নবাব রত্নসিংহাসন ত্যাগ করিয়া উঠিলেন, হীরকখচিত উষ্ণীষ দূরে নিক্ষেপ করিলেন—মুক্তার হার কণ্ঠ হইতে ছিঁড়িয়া ফেলিলেন—রত্নখচিত বেশ অঙ্গ হইতে দূর করিলেন।—তখন নবাব ভূমিতে অবলুণ্ঠিত হইয়া ‘দলনী! দলনী!’ বলিয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন।
এ সংসারে নবাবি এইরূপ।