সাবিত্রী
তমিস্রা রজনী ব্যাপিল ধরণী,
দেখি মনে মনে পরমাদ গণি,
বনে একাকিনী বসিলা রমণী
                      কোলেতে করিয়া স্বামীর দেহ।
আঁধার গগন ভুবন আঁধার,
অন্ধকার গিরি বিকট আকার
দুর্গম কান্তার ঘোর অন্ধকার,
                    চলে না ফেরে না নড়ে না কেহ ||

কে শুনেছে হেথা মানবের রব?
কেবল গরজে হিংস্র পশু সব,
কখন খসিছে বৃক্ষের পল্লব,
                          কখন বসিছে পাখী শাখায়।
ভয়েতে সুন্দরী বনে একেশ্বরী,
কোলে আরও টানে পতিদেহ ধরি,
পরশে অধর অনুভব করি,
                      নীরবে কাঁদিয়া চুম্বিছে তায় ||

হেরে আচম্বিতে এ ঘোর সঙ্কটে,
ভয়ঙ্কর ছায়া আকাশের পটে,
ছিল যত তারা তাহার নিকটে
                       ক্রমে ম্লান হয়ে গেল নিবিয়া।
সে ছায়া পশিল কাননে,-অমনি,
পলায় শ্বাপদ উঠে পদধ্বনি,
বৃক্ষশাখা কত ভাঙ্গিল আপনি,
                    সতী ধরে শবে বুকে আঁটিয়া ||

সহসা উজলি ঘোর বনস্থলী,
মহাগদাপ্রভা, যেন বা বিজলী,
দেখিয়া সাবিত্রী যেন রত্নাবলী,
                      ভাসিল নিঝরে আলোক তার।
মহাগদা দেখি প্রণমিলা সতী,
জানিল কৃতান্ত পরলোকপতি,
এ ভীষণা ছায়া তাঁহারই মূরতি,
                   ভাগ্যে যাহা থাকে হবে এবার ||