পার্শ্ববর্তী পুরুষ বলিল, “তোমায় চিনি। তুমি দলনী বেগম ।”

দলনী শিহরিল।

পার্শ্বস্থ পুরুষ পুনরপি কহিল, “জানি, তুমি এই বিজন স্থানে দুরাত্মা কর্তৃক পরিত্যক্ত হইয়াছ।”

দলনীর চক্ষের প্রবাহ আবার ছুটিল। আগন্তুক কহিল, “এক্ষণে তুমি কোথা যাইবে?”

সহসা দলনীর ভয় দূর হইয়াছিল। ভয় বিনাশের দলনী বিশেষ কারণ পাইয়াছিল। দলনী কাঁদিল। প্রশ্নকর্তা প্রশ্ন পুনরুক্ত করিলেন। দলনী বলিল, “যাইব কোথায়? আমার যাইবার স্থান নাই। এক যাইবার স্থান আছে—কিন্তু সে অনেকদূর। কে আমাকে সেখানে সঙ্গে লইয়া যাইবে?”

আগন্তুক বলিলেন, “তুমি নবাবের নিকটে যাইবার বাসনা পরিত্যাগ কর ।”

দলনী উৎকণ্ঠিতা, বিস্মিতা হইয়া বলিলেন, “কেন?”

“অমঙ্গল হইবে।”

দলনী শিহরিল, বলিল, “ঘটুক। সেই বৈ আর আমার স্থান নাই। অন্যত্র মঙ্গলাপেক্ষা স্বামীর কাছে অমঙ্গলও ভাল।”

“তবে উঠ। আমি তোমাকে মুরশিদাবাদে মহম্মদ তকির নিকট রাখিয়া আসি। মহম্মদ তকি তোমাকে মুঙ্গেরে পাঠাইয়া দিবেন। কিন্তু আমার কথা শুন। এক্ষণে যুদ্ধ আরম্ভ হইয়াছে। নবাব স্বীয় পৌরজনকে রুহিদাসের গড়ে পাঠাইবার উদ্যোগ করিতেছেন। তুমি সেখানে যাইও না।”

“আমার কপালে যাই থাকুক, আমি যাইব ।”

“তোমার কপালে মুঙ্গের দর্শন নাই ।”

দলনী চিন্তিত হইল। বলিল, “ভবিতব্য কে জানে? চলুন, আপনার সঙ্গে মুরশিদাবাদ যাইব। যতক্ষণ প্রাণ আছে, নবাবকে দেখিবার আশা ছাড়িব না ।”

আগন্তুক বলিলেন, “তাহা জানি। আইস ।”

দুইজনে অন্ধকার রাত্রে মুরশিদাবাদে চলিল। দলনী-পতঙ্গ বহ্নিমুখবিবিক্ষু হইল।