তখন, মুসলমানেরা আশ্রয় ত্যাগ করিয়া, তরবারি ও বর্শা হস্তে চীৎকার করিয়া আমিয়টের নৌকাভিমুখে ধাবিত হইল। দেখিয়া স্থির প্রতিজ্ঞ ইংরেজেরা ভীত হইল না।

স্থির চিত্তে, নৌকামধ্য হইতে দ্রুতাবতরণপ্রবৃত্ত মুসলমানদিগকে লক্ষ্য করিয়া আমিয়ট, গল্ষ্টুন ও জন্সতন, স্বহস্তে বন্দুক লইয়া অব্যর্থ সন্ধানে প্রতি বারে এক এক জনে এক এক জন যবনকে বালুকাশায়ী করিতে লাগিলেন।

কিন্তু যেরূপ তরঙ্গের উপর তরঙ্গ বিক্ষিপ্ত হয়, সেইরূপ যবনশ্রেণীর উপর যবনশ্রেণী নামিতে লাগিল। তখন আমিয়ট বলিলেন, “আর আমাদিগের রক্ষার কোন উপায় নাই। আইস আমরা বিধর্মী নিপাত করিতে করিতে প্রাণত্যাগ করি ।”

ততক্ষণে মুসলমানেরা গিয়া আমিয়টের নৌকায় উঠিল। তিনজন ইংরেজ এক হইয়া এককালীন আওয়াজ করিলেন। ত্রিশূলবিভিন্নের ন্যায় নৌকারূঢ় যবনশ্রেণী ছিন্নভিন্ন হইয়া নৌকা হইতে জলে পড়িল।

আরও মুসলমান নৌকার উপর উঠিল। আরও কতকগুলা মুসলমান মুদ্গরাদি লইয়া নৌকার তলে আঘাত করিতে লাগিল। নৌকার তলদেশ ভগ্ন হইয়া যাওয়ায়, কল কল শব্দে তরণী জলপূর্ণ হইতে লাগিল।

আমিয়ট সঙ্গীদিগকে বলিলেন, “গোমেষাদির ন্যায় জলে ডুবিয়া মরিব কেন? বাহিরে আইস, বীরের ন্যায় অস্ত্রহস্তে মরি ।”

তখন তরবারি হস্তে তিনজন ইংরেজ অকুতোভয়ে, সেই অগণিত যবনগণের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল। একজন যবন, আমিয়টকে সেলাম করিয়া বলিল, “কেন মরিবেন? আমাদিগের সঙ্গে আসুন ।”

আমিয়ট বলিলেন, “মরিব। আমরা আজি এখানে মরিলে, ভারতবর্ষে যে আগুন জ্বলিবে, তাহাতে মুসলমান রাজ্য ধ্বংস হইবে। আমাদের রক্তে ভূমি ভিজিলে তৃতীয় জর্জের রাজপতাকা তাহাতে সহজে রোপিত হইবে ।”

“তবে মর ।” এই বলিয়া পাঠান তরবারির আঘাতে আমিয়টের মুণ্ড চিরিয়া ফেলিল। দেখিয়া ক্ষিপ্রহস্তে গল্ষ্ট ন‍ সেই পাঠানের মুণ্ড স্কন্ধচ্যুত করিলেন।

তখন দশ বার জন যবনে গল্ষ্টঠন‍কে ঘেরিয়া প্রহার করিতে লাগিল। এবং অচিরাৎ বহু লোকের প্রহারে আহত হইয়া গল্ষ্ট ন্ ও জন্স্ন উভয়েই প্রাণত্যাগ করিয়া নৌকার উপর শুইলেন।

তৎপূর্বেই ফষ্টর নৌকা খুলিয়া গিয়াছিল।