প্রাণাধিকেষু—

এবার যখন কোন সুযোগ পাইবে আমার ঘরের চাবির গোছা পাঠাইয়া দিও। তোমার পিতার আমলের বঙ্গদর্শন তিন বৎসর আমার জন্য বাঁধাইয়া দিও।

আমি এক বেল কাগজ পাঠাইয়াছি, পৌঁছিয়াছে কিনা সংবাদ পাই নাই। সংবাদ লিখিবে। রথের সে ১৫ টাকা কি হইল লিখিবে। বড়বাবু দিয়াছেন কি?

আনন্দমঠ যে সংখ্যায় বাহির হইয়াছে সেই সংখ্যা হইতে এক কপি বঙ্গদর্শন অক্ষয় সরকারকে দিও। “With B.C. Chatterjee’s compliments” লিখিয়া দিও। তাহা হইলে তোমাদের দেওয়া বুঝাইবে না। আনন্দমঠ শেষ হইলে দেওয়া বন্ধ করিবে।

আমায় হাবড়ায় পত্র লিখিও। বঙ্গদর্শন অচল হইলে আমাকে জানাইও। টাকা বা matter সম্বন্ধে যাহা উপকার করিতে পারি করিব।

রাধানাথ আমাকে আন্দাজি ৩০‍৲ দিয়াছে। তোমাদের যদি despatch বন্ধ থাকে তবে লিখিও, আমি টাকা পাঠাইব।

ইতি তাং ১৪ জুলাই

শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র চাটার্জি

ঝিনাইদাহ, ২২শে কার্তিক



প্রিয়তমেষু—

তোমার পিতাকে আর অধিক কুইনাইন খাওয়াইবা না। কলিকাতায় পাঠাইবা। আমি জ্বরে বড় কষ্ট পাইয়াছি। যশোহর হইতে ডাক্তার ও ঔষধ আনাইয়া চিকিৎসা হইয়াছে। কাল রাত্রিতে জ্বর ছাড়িয়াছে। এই পত্রের সহিত তোমাদের সাংসারিক খরচ ১০০‍৲ টাকা, পূজার ১০‍৲ টাকা, ৺ঠাকুর সেবার বাকী ১৬‍৲, একুনে ১২৬‍৲ টাকা পাঠাইলাম। তোমার পিতর হাতে দিবে।

শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়



প্রাণাধিকেষু,

বারাসতের ডেপুটি-ম্যাজিষ্ট্রেট কেদার বসু রবিবার দিন প্রাতে কাঁটালপাড়ায় যাইবেন ও বৈঠকখানায় দুইদিন বাস করিবেন। বৈঠকখানাটি ঝাঁট দিয়া সাফ করাইয়া টেবিল চৌকি পাতিয়া রাখিবা। শয়ন জন্য একখানি তক্তপোষ পাতিয়া দিবা। রন্ধন জন্য কোন চালা সাফ করাইয়া রাখিবা, রাত্রিতে শয়ন জন্য আমায় যেরূপ বিছানা দাও, সেইরূপ দিবা। কেদারবাবু বড় ভদ্রলোক, পরম বৈষ্ণব ও শুদ্ধাচার। তাঁহাকে আনাইবার জন্য ষ্টেশনে ৮||• টার ট্রেণে লোক উপস্থিত থাকিলে ভাল হয়।

পুঃ কর্তার সপিণ্ড সময়ে সমাজ খাওয়ানো হয় নাই, আগামী বুধবার উদ্যোগ করার ইচ্ছা আছে, আম্র দধি ইত্যাদির বন্দোবস্ত রাখিবা। ভাল গ্লাস দেওয়ার জন্য কুম্ভকার ঠিক করিবা।

কেদারবাবুকে আনিতে ষ্টেশনে তুমি নিজে গেলে ভাল হয়।

আং শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়



প্রিয়তমেষু,

মুরলী যে কাঁটালপাড়ায় যায় এমন কোন সম্ভাবনা নাই। বড়বাবুরও চাকর নাই। চাকর যাহাকে যাহাকে বহাল করিয়াছিলেন তাহারা পালাইয়াছে। কেহ থাকিতে চাহে না। আজ তিনি পৃথক বাসা করিয়াছেন, তাঁহার বাসায় অটল মোতায়েন আছে, অতএব মুরলীকে পাঠাইলে আমার বাসায় কাজ চলিবে না। অটল মুরলী উভয়ে উপস্থিত না থাকিলে বড়বাবুর কার্য চলে না। কেননা তাঁহার বাসায় জনপ্রাণী নাই। আমার কাঁটালপাড়া যাইবার কোন সম্ভাবনা নাই। বড়বাবুর অবস্থা ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিবর্তন হইতেছে, কখন কি রকম হয় তাহার স্থির নাই। তিনি আমাকে কোথাও যাইতে দেন না। রাত্রে উঠাইয়া আনেন। সুতরাং তাঁহাকে ফেলিয়া আমি কাঁটালপাড়া যাইতে পারিব না।

তোমার জ্যেষ্ঠতাতের এই মরণাপন্ন অবস্থা, আর তোমার পিতার শয্যাগত এই অবস্থায় তুমি যে ভোজের ঘটা বাধাইয়াছ তাহা অতি বিস্ময়কর। তোমার বালকবুদ্ধি আজও যায় নাই।

যাহা হউক সেখানে মুরলীর যাওয়া হইল না। সেখানে লোকাভাবে অটলকে পাঠান হইল না। আমার ছুরিকাঁটা যাহা ছিল তাহা ঝিনাইদহ হইতে আসিবার সময় Shirres সাহেবকে দিয়া আসিয়াছি। বেসেট যাহা আছে তাহা টেবিলে বাহির করা যায় না।

আমার বিবেচনায় যদি গোপেন্দ্রকৃষ্ণকে খাওয়াইতে হয়, তবে আমাদের দেশী ব্যঞ্জনাদি উত্তম করিয়া খাওয়াইলে ভাল হইতে পারে। তুমি যে ২||• পাঠাইয়াছিলে তাহা ফেরত পাঠাইলাম।

ইতি তাং বুধবার

শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

১লা ফেব্রুয়ারী ১৮৮৬