পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা
এই সকল বিষয়ে তাঁহার লিপিপ্রণালীর সঙ্গে বাইরণের লিপিপ্রণালীর বিশেষ সাদৃশ্য দেখা যায়। চরিত্রের আশ্লেষণে দুই জনের এক জনও শক্তি প্রকাশ করেন না।—বিশ্লেষণে দুই জনেরই কিছু শক্তি আছে। নাটকের যাহা প্রাণ—হৃদয়ে হৃদয়ে “ঘাত প্রতিঘাত”—দুই জনের এক জনের কাব্যে তাহার কিছুমাত্র নাই। কিন্তু অন্য দিকে দুই জনেই শক্তিশালী। ইংরেজিতে বাইরণের কবিতা তীব্রতেজস্বিনী, জ্বালাময়ী, অগ্নিতুল্যা। বাঙ্গালাতেও নবীন বাবুর কবিতা সেইরূপ তীব্রতেজস্বিনী, জ্বালাময়ী, অগ্নিতুল্যা। তাঁহাদিগের হৃদয়নিরুদ্ধ ভাব সকল আগ্নেয়গিরিনিরুদ্ধ, অগ্নিশিখাবৎ—যখন ছুটে, তখন তাহার বেগ অসহ্য। বাইরণ স্বয়ং এক স্থানে কোন নায়কের প্রণয়বেগ বর্ণনাচ্ছলে নায়ককে যাহা বলাইয়াছেন, তাঁহার নিজের কবিতার বেগ এবং নবীন বাবুর কবিতার বেগ সম্বন্ধে তাহাই বলা যাইতে পারে।
*
*
*
*
But mine was like the lava flood
That boils in Etna’s breast of flame.
I cannot prate in pulling strain
of ladye-love and beauty’s chain :
If changing cheek and scorching vein,
Lips taught to writhe but not complain,
If bursting heart, and madd’ning brain,
And daring deed and vengeful steel
And all that I have felt and feel,
Betoken love, that love was mine,
And shown by many a bitter sign. *
But mine was like the lava flood
That boils in Etna’s breast of flame.
I cannot prate in pulling strain
of ladye-love and beauty’s chain :
If changing cheek and scorching vein,
Lips taught to writhe but not complain,
If bursting heart, and madd’ning brain,
And daring deed and vengeful steel
And all that I have felt and feel,
Betoken love, that love was mine,
And shown by many a bitter sign. *
নবীন বাবুরও যখন স্বদেশবাৎসল্য স্রোতঃ উচ্ছলিত হয়, তখন তিনিও রাখিয়া ঢাকিয়া বলিতে জানেন না। সেও গৈরিক নিস্রবের ন্যায়। যদি উচ্চৈঃস্বরে রোদন, যদি আন্তরিক মর্মভেদী কাতরোক্তি, যদি ভয়শূন্য তেজোময় সত্যপ্রিয়তা, যদি দুর্বাসাপ্রার্থিত ক্রোধ, দেশবাৎসল্যের লক্ষণ হয়—তবে সেই দেশবাৎসল্য নবীন বাবুর, এবং তাহার অনেক লক্ষণ এই কাব্যমধ্যে বিকীর্ণ হইয়াছে।
বাইরণের ন্যায় নবীন বাবু বর্ণনায় অত্যন্ত ক্ষমতাশালী। বাইরণের ন্যায়, তাঁহারও শক্তি আছে যে, দুই চারিটি কথায়, তিনি উৎকৃষ্ট বর্ণনার অবতারণ করিতে পারেন। ক্লাইবের নৌকারোহণ ইহার দৃষ্টান্তস্থল। কিন্তু অনেক সময়েই, নবীন বাবু সে প্রথা পরিত্যাগ করিয়া, বর্ণনায় অনর্থক কালহরণ করেন।
যাহাই হউক, কবিদিগের মধ্যে নবীন বাবুকে আমরা অধিকতর উচ্চ আসন দিতে পারি না পারি, তাঁহাকে বাঙ্গালার বাইরণ বলিয়া পরিচিত করিতে পারি। এ প্রশংসা বড় অল্প প্রশংসা নহে। পলাশির যুদ্ধ যে বাঙ্গালার সাহিত্যভাণ্ডারে একটি বহুমূল্য রত্ন তদ্বিষয়ে সংশয় নাই।
উপসংহারকালে, পাঠকদিগকে আমরা একটি কথা বলিব। পলাশির যুদ্ধের আমরা রাখিয়া ঢাকিয়া পরিচয় দিয়াছি। যদি তাঁহারা ইহার যথার্থ পরিচয় লইতে ইচ্ছা করেন, আদ্যোপান্ত স্বয়ং পাঠ করিবেন। যে বাঙ্গালি হইয়া বাঙ্গালির আন্তরিক রোদন না পড়িল, তাহার বাঙ্গালি জন্ম বৃথা। —‘বঙ্গদর্শন’, কার্তিক ১২৮২, পৃ. ৩১৯-২৭।
* The Giaour