শ্রীচরণেষু—

আপনি মঙ্গলবার যে পত্র লিখিয়াছিলেন তাহা আমি বৃহস্পতিবারে পাইয়াছি। আর বুধবারে যে পত্র লেখেন তাহা শুক্রবার পাইয়াছি। এরূপ বিলম্বের কারণ আপনার চিঠি সময়ে post হয় না। তিনটার মধ্যে চিঠি post করিতে হয়।

দাদার পীড়া মারাত্মক নহে তজ্জন্য ব্যস্ত হইবেন না। গোড়ায় Homeopathic treatment করিলে tap করিবার প্রয়োজন হইত না। এক্ষণে হইয়াছে ঔষধ আমি তাঁহাকে বলিয়া দিব যদি আর কখনও হয় তবে প্রথমাবস্থায় ব্যবহার করিলে সহজে আরাম হইবে। আমার ভরসা আছে রক্ষা পাইবেন।

যতদিন না নিঃশেষ আরাম হন ততদিন কলিকাতায় রাখিবেন। বোধ করি তাঁহার চিকিৎসার ব্যয় তাঁহাকে কিছুই বহন করিতে দেন নাই। ব্যয় আমার ব্যয়ে হওয়া কর্তব্য। টাকার প্রয়োজন হইলে উমাচরণকে বলিবেন সে সরবরাহ করিবে। দাদার নিঃশেষ আরোগ্য সম্বাদের প্রতীক্ষায় রহিলাম। ১০ই মাঘ।

শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়



শ্রীচরণেষু—

আপনার একখানা পত্র পাইলাম, তাহার তারিখ নাই, প্রায় থাকে না।

বরদা ভট্টাচার্য ৫‍৲ খাজানা পায় তজ্জন্য সে ৫X২০=১০০‍৲ পাইতে পারে। High Court ruling এই যে Every person should receive amount of compensation proportionate to his interest in the land, উহার interest ৫‍৲ annually— এ জন্য ১০০‍৲ পাইতে পারে। আমি ঐ ১০০‍৲ লইয়া সাধাসাধি করিয়াছি তাহাতে সে আমাকে কটূক্তি করিয়া গিয়াছে।

তার উপর উহাকে বলিয়াছি যে যদি তুমি না লও তবে তোমাকে চিরকাল ঐ খাজনা দিব। এবং তাহার খাজানা আদায়ের জন্য আমার অন্য সম্পত্তি আবদ্ধ রাখিয়া লেখাপড়া করিয়া registry করিয়া দিতে চাহিয়াছিলাম। তাহাতে সে রাজী না হইয়া কড়া কথা বলিয়া গিয়াছে।

তাহাকে কেহ বুঝাইয়াছে যে আমি ১২০০‍৲ টাকা পাইয়াছি তাহার মধ্যে ৮০০‍‍৲ তাহার প্রাপ্য, বড়বাবু আমাকে আটশত টাকা দিবার জন্য পুনঃ পুনঃ অনুরোধ করিয়াছেন এবং নিজে চণ্ডী ভট্টচার্য প্রভৃতিকে ফাঁকি দিবার জন্য আমার সাহায্য চাহিতেছেন। যখন জমি মাপ হয় তখন আমি ঝিনাইদহ ছিলাম, আমার লোকজন জরিপের সময়ে কেহ উপস্থিত ছিল না। তথাপি এই ভট্টাচার্য বলিয়া বেড়াইতেছে যে আমি জুয়াচুরি করিয়া খরিদা ব্রহ্মোত্তর বলিয়া তাহা খাইয়াছি এবং আপনাকেও ঐরূপ লিখিতে সাহস করিয়াছে। যখন কাঁটালপাড়ার সকল লোকের আমার প্রতি এই ব্যবহার, তখন কাজেই কাঁটালপাড়ার বাড়ী ফেলিয়া দিলাম।

ইতি ১১ জুন

শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়



Midnapore, 1887

17th Aug., ২রা ভাদ্র

শ্রীচরণেষু—

কাঁটালপাড়ায় স্কুল বা কলেজ বা University যাহাই হ’ক তাহাতে আমি কোন সাহায্য করিব না। কাঁটালপাড়ার পূজায় আমি টাকা দিব না। এ বৎসর আমি ও আমার পরিবার পূজার সময়ে মেদিনীপুরেই থাকিব। সুতরাং কলিকাতাতেও পূজা করিতে পারিলাম না।

যেখানে বরদা ভট্টাচার্যের মত ব্যক্তি আমাকে জুয়াচোর বলে, যে স্থানে রামকৃষ্ণ ও ব্রজনাথের মত লোক আমার পিতাকে জালসাজ বলে, যে দেশে বসন্ত ও চণ্ডী ভট্টাচার্যের মত লোকের সঙ্গে দলাদলি এবং যেখানে বড়বাবুর মত সহোদরের মুখদর্শন করিতে হয়, সে দেশের সঙ্গে আমি কোন সম্বন্ধ রাখিব না। সেখানে আমার দুর্গোৎসব হইবে না।

শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়