পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা
“হে রাত্রি! পার্থিব রজঃ তোমার পিতার কিরণে পরিপূর্ণ হইয়াছিল। হে বৃহতি! তুমি দিব্যালয়ে থাক, অতএব তমঃ বর্তে। যে নরদর্শকেরা তোমাতে যুক্ত তাহারা নবনবতি বা অষ্টাশীতি বা সপ্তসপ্ততি হউক (অর্থ কি?) সর্বভূতনিবেশনী, জননী, ভদ্রা, ভগবতী, কৃষ্ণা, এবং বিশ্বজগতের নিশাস্বরূপ রাত্রিকে প্রাপ্ত হই। সকলের প্রবেশকারিণী শাসনকত্রী (?) গ্রহনক্ষত্রমালিনী, মঙ্গলযুক্তা রাত্রিকে আমি প্রাপ্ত হইয়াছি; হে ভদ্রে! আমরা যেন পারে যাই, আমরা যেন পারে যাই, ওঁ নমঃ। দেবী, শরণ্যা বহ্বৃচপ্রিয়া, সহস্রাতুল্যা দুর্গাকে আমি যত্নে তুষ্ট করি। আমরা জাতবেদাকে (অগ্নি) সোমদান করি। দ্বিজাতিগণের শান্ত্যর্থ তুমি ঋষিদিগের আশ্রয় (?) ঋগ্বেদে তুমি সমুৎপন্না অগ্নি অরাতিদিগের দহন করেন (?) দেবি! যে ব্রাহ্মণেরা, অবিদ্যা হউন, বা বহুবিদ্যা হউন, তোমার কাছে আসেন, তিনি (?) আমাদের সকল বিপদে ত্রাণ করিবেন। যে ব্রাহ্মণেরা অগ্নিবর্ণা, শুভা, সৌম্যাকে কীর্তিত করিবে, সমুদ্রে নৌকার ন্যায় অগ্নি তাহাদিগকে বিপদ হইতে পার করিবেন। বিপদে ঘোর বিষম সংগ্রামে, সঙ্কটে বিষয় বিপদে সংগ্রামে, বনে অগ্নিনিপাতে, চোরনিপাতে, দুষ্টগ্রহ নিবারণে, তোমার কাছে আসে, এ সকল হইতে আমাকে অভয় কর! এ সকল হইতে আমাকে অভয় কর! ওঁ নমঃ। যিনি সর্বভূতের কেশিনী, পঞ্চমী নাম যাঁর, সেই দেবী প্রতিরাত্রে সকল হইতে পরিরক্ষণ করুন! সকল হইতে আমাকে পরিরক্ষণ করুন! ওঁ নমঃ। অগ্নিবর্ণা তপের দ্বারা জ্বালাবিশিষ্টা, বৈরোচনী কর্মফলে জুষ্টা, দুর্গাদেবীর শরণাগত হই, হে সুবেগবতি! তোমার বেগকে নমস্কার। দুর্গাদেবী বিপদস্থলে আমাদের মঙ্গলার্থ হউন। এই পবিত্র দুর্গা স্তব যে রাত্রে সদা পাঠ করিবে—রাত্রি, কুশিক, সৌভর, রাত্রিস্তব, গায়ত্রী, যে রাত্রিসূক্ত নিত্য জপ করে যে তৎকাল প্রাপ্ত হয়।”
ইহার সকল স্থলে অনুবাদ হইয়া উঠে নাই, এবং যাহা অনুবাদ হইয়াছে তাহার সকল স্থলের কেহ অর্থ করিতে পারে না। কিন্তু এত দূর বুঝা যাইতেছে যে, যদি এই দেবী আমাদের পূজিতা দুর্গা হয়েন, তবে দুর্গা রাত্রির অন্যেতর নাম মাত্র।
ইহা ভিন্ন যজুর্বেদের (বাজসনেয়) সংহিতায় এক স্থানে অম্বিকার উল্লেখ আছে। কিন্তু সেখানে অম্বিকা শিবের ভগিনী, যথা—
“এষ তে রুদ্র ভাগঃ স্বস্রা অম্বিকয়া ত্বং জুষস্ব স্বাহা ||”
আর কোন সংহিতায় কোথাও দুর্গার কোন নামের কোন উল্লেখ নাই।
তৎপরে ব্রাহ্মণ। কোন ব্রাহ্মণে কোন নামে ইঁহার কোন উল্লেখ নাই। তারপর উপনিষদ্। উপনিষদে দুর্গার নাম কোথাও নাই; এক স্থানে উমা হৈমবতী, আর এক স্থানে কালী করালী নামে উল্লেখ আছে। ঐ দুইটি স্থানই আমরা ক্রমশঃ উদ্ধৃত করিতেছি।
প্রথম, কেনোপনিষদে আছে—
“অথ ইন্দ্রম্ অব্রুবন্ মঘবন্নেতদ্বিজানীহি কিমেতদ্যক্ষমিতি। তথেতি তদভ্যদ্রবত্তস্মাত্তিরোদধে।
স তস্মিন্নেবাকাশে স্ত্রিয়মাজগাম বহুশোভমানামুমাং হৈমবতীম্।
তং হোবাচ কিমেতদ্যক্ষমিতি।
সা ব্রহ্মেতি হোবাচ ব্রহ্মণো বা এতদ্বিজয়ে মহীয়ধ্বমিতি। ততো হৈব বিদাঞ্চকার ব্রহ্মেতি” “তাঁহারা তখন ইন্দ্রকে বলিলেন, “মঘবন্ এ যক্ষ কি জানুন।” ইন্দ্র “তাই” বলিয়া তাহার কাছে গেলেন, সে অন্তর্ধান হইল।
সেই আকাশে বহুশোভমানা উমা হৈমবতী নামক স্ত্রীলোকের নিকট আসিলেন। তাঁহাকে বলিলেন, “কি এ যক্ষ?” তিনি কহিলেন, “এ ব্রহ্মা, ব্রহ্মার এই বিজয়ে আপনারা মহৎ হউন।” তাহাতে জানিলেন যে, ইতি ব্রহ্ম।”