[সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে লিখিত]
শ্রীচরণেষু

অঘোর বরাটকে একটু পত্র লিখিবেন, যে, মাঘ মাসের বঙ্গদর্শন বাহির করার পক্ষে আপত্তি নাই, ভবিষ্যৎ সংখ্যার প্রতি আপত্তি আছে। অর্থাৎ মাঘ সংখ্যা ভিন্ন আর বাহির করিতে দিবেন না। ইহা লিখিবেন।

পত্র পাঠ মাত্র ইহা লিখিবেন। চন্দ্র অপ্রতিভ হইয়া অনেক কাকুতি মিনতি করিতেছে। কিন্তু এটুকু লইলে বিবাদ সম্পূর্ণ মিটিবে না। ইতি তাং ২৩ ফেব্রুয়ারি [১৮৮৪]1
“শ্রীশচন্দ্র মজুমদার” সাহিত্য-সাধক-চরিতমালা—পৃষ্ঠা ৩৫]

শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

[শ্রীশচন্দ্র মজুমদারকে লিখিত]
প্রিয়তমেষু,

আমি হাঁপানির পীড়ায় অত্যন্ত অসুস্থ থাকায় তোমার পত্রের উত্তর দিতে বিলম্ব হইয়াছে।

গেজেটে তোমার appointment দেখিয়া অত্যন্ত আহ্লাদিত হইলাম। ভরসা করি শীঘ্রই চাকরী চিরস্থায়ী হইবে।

“পদরত্নাবলী” পাইয়াছি। কিন্তু সুখ্যাতি কাহার করিব? কবিদিগের না সংগ্রহকারদিগের? যদি কবিদিগের প্রশংসা করিতে বল, বিস্তর প্রশংসা করিতে পারি। আর যদি সংগ্রহকারদিগের প্রশংসা করিতে বল, তবে কি কি বলিব আমায় লিখিবে, আমি সেইরূপ লিখিব। তুমি বরং রবীন্দ্রনাথ, যখন সংগ্রহকারক, তখন সংগ্রহ যে উৎকৃষ্ট হইয়াছে তাহা কেহই সন্দেহ করিবে না এবং আমার সার্টিফিকেট নিষ্প্রোয়োজন। তথাপি তোমরা যাহা লিখিতে বলিবে, লিখিব।

কৃষ্ণ সম্বন্ধে যে প্রশ্ন করিয়াছ, পত্রে তাহার উত্তর সংক্ষেপে দিলেই চলিবে। আমি যাহা লিখিয়াছি (নবজীবনে ও প্রচারে) ও যাহা লিখিব, তাহাতে এই দুইটি তত্ত্ব প্রমাণিত হইবে।

১। শ্রীকৃষ্ণ ইচ্ছাক্রমে কদাপি যুদ্ধে প্রবৃত্ত নহেন।

২। ধর্মযুদ্ধ আছে। ধর্মার্থেই মনুষ্যকে অনেক সময় যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইতে হয় (যথা William the Silent) ধর্মযুদ্ধে অপ্রবৃত্তি অধর্ম। সে সকল স্থানে ভিন্ন শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধে কখনও প্রবৃত্ত হয়েন।

৩। অন্যে যাহাতে ধর্মযুদ্ধ ভিন্ন কোন যুদ্ধে কখন প্রবৃত্ত না হয়, এ চেষ্টা তিনি সাধ্যানুসারে করিয়াছিলেন।

মনুষ্যে ইহার বেশী পারে না। কৃষ্ণচরিত্র মনুষ্যচরিত্র। ঈশ্বর লোকহিতার্থে মনুষ্যচরিত্র গ্রহণ করিয়াছিলেন।

কৃষ্ণনগরে কবে যাইবে? ইনি তাং ২৫শে আশ্বিন [১২৯২] [১০ অক্টোবর ১৮৮৫]

শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

‘প্রদীপ’]
1 অগ্রহায়ণ ও পৌষ সংখ্যা ‘বঙ্গদর্শনে’ প্রকাশিত চন্দ্রনাথ বসুর “পশুপতি সম্বাদ” বঙ্কিমচন্দ্রকে ক্ষুণ্ণ করিয়াছিল বলিয়া মনে হয়। এই প্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র তাঁহার মেজদাদা সঞ্জীবচন্দ্রকে উক্ত পত্রখানি লেখেন।